বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক অমর নাম শর্মিলা ঠাকুর। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পর বাংলা সিনেমায় ফিরে আসার মধ্য দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন তিনি । সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পুরাতন’ সিনেমায় তার অভিনয় আজও দর্শকদের মুগ্ধ করে চলেছে । আর এই ফিরে আসা যেন বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এক বিশেষ উপহার।
শর্মিলার এই প্রত্যাবর্তনে তার পুত্রবধূ বলিউডের আলোচিত অভিনেত্রী কারিনা কাপুর খান বেশ খুশি। সামাজিক মাধ্যমে শাশুড়ির অভিনয় নিয়ে তিনি বলেন, তিনি বাংলার আইকন। আমার শাশুড়ি শর্মিলা ঠাকুরকে শুভেচ্ছা জানাই।তিনি বাংলার বাঘিনী আর সর্বদাই তাই থাকবেন। ‘পুরাতন’ সিনেমা সবসময়ই অনেক অসাধারণ । আমি নিশ্চিত এটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছে।
সম্প্রতি শর্মিলা ঠাকুর গণমাধ্যমকে জানান , পুরাতন সিনেমাতে হয়তো এটাই আমার শেষ বাংলা সিনেমা। শুটিংয়ের জন্য আমি আর ফিট নই । তাই ভবিষ্যতে সিনেমায় কাজ করা সম্ভব হবে না। তার এই মন্তব্য অবশ্য বাংলা সিনেমার দর্শকদের জন্য এক দুঃখজনক সংবাদ, কারণ তার উপস্থিতি ছাড়া বাংলা সিনেমার পর্দা কিছুটা অপূর্ণ মনে হবে।
কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপরাজিত’ সিনেমার মাধ্যমে শর্মিলা ঠাকুরের সিনেমা যাত্রা শুরু হয়েছিল । সেই সময়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার রসায়ন ছিল অনবদ্য, যা আজও দর্শকদের স্মৃতিতে অম্লান। তবে শর্মিলা শুধুমাত্র বাংলা সিনেমার সঙ্গেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না । পরবর্তীতে বলিউডেও তার সফল ক্যারিয়ার ছিল অত্যন্ত উজ্জ্বল। সুযোগ পেলে তিনি বারবার বাংলা সিনেমায় ফিরে এসেছেন । কেননা , সেখানে তার অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল অবিচ্ছিন্ন।
‘পুরাতন’ সিনেমায় শর্মিলা ঠাকুরের উপস্থিতি যেন ছিল তার দীর্ঘদিনের অভিনয় জীবনের এক নতুন মোড়। সিনেমাটিতে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও অন্যান্য তারকাদের সঙ্গে তার পারফরম্যান্স ছিল সত্যিই অসাধারণ। দর্শকরা তার অভিনয়ের প্রশংসায় ভাসছেন এবং তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন তিনি কখনোই সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হননি।
একসময়ের বলিউডে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠা শর্মিলা ঠাকুর কখনোই বাংলা সিনেমার প্রতি তার ভালোবাসা হারাননি। তিনি ছিলেন এক সোনালী যুগের অংশ । ‘অপরাজিত’, ‘অন্নপূর্ণা’, ‘আলোচন’ বা ‘নকশী কাঁথা’ সিনেমার মাধ্যমে বাংলা সিনেমার পর্দায় তার প্রভাব রেখেছিলেন। আর এখন ‘পুরাতন’ সিনেমায় ফেরার মাধ্যমে তার মায়াময় উপস্থিতি এক নতুন আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছে।
এতদিন পর বাংলার এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর যে ভালোবাসা, নিষ্ঠা আর দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর হয়তো এটি তার শেষ চলচ্চিত্র । তবে তার অভিনয়ের ঐশ্বর্য , কণ্ঠের মধুরতা এবং চিরকালীন আবেদন বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে।
এসকে//