খালার অগোচরে মানিব্যাগ থেকে ৩০০০ টাকা চুরির সময় ধরা পড়ে যায় গোলাম রব্বানী (১৪)। তার মাকে বলে দিতে চাওয়ায় টেবিলে থাকা ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালাকে, পরে তার চিৎকারে ছুটে আসা ছোট খালাকে ছুরি দিয়ে এবং শিলপাটা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে সে। অভিযুক্ত রব্বানীকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১২ মে) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি জানান, ৯ মে ওই শিশু যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ার বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ার জন্য পাঞ্জাবি পরে বের হয়। কিন্তু সে বাসা থেকে বের হয়ে প্রাইভেট পড়তে না গিয়ে সাইকেল কেনার উদ্দেশ্যে তার বড় খালার (মরিয়ম বেগম) শেওড়াপাড়ার বাসায় যায়।
সিএনজির ভেতরেই সে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে নীল রঙের টিশার্ট পরিধান করে। তারপর শেওড়াপাড়া মেট্রোরেলের নিচে নেমে একটি লাল রঙের ক্যাপ মাথায় ও মুখে মাস্ক পরে আনুমানিক ১২টা ৫০ মিনিটে বড় খালার বাসায় পৌঁছায়।
বাসায় আসার কারণ জানতে চাইলে সে তার খালাকে জানায়, রব্বানী আর তা মা খালাকে দেখতে এসেছে। তার মা কিছুক্ষণ পরে আসবেন। এসময় তার বড় খালা শরবত বানাতে গেলে রব্বানী টিভির পাশে রাখা মানিব্যাগ থেকে পুরাতন সাইকেল কেনার জন্য তিন হাজার টাকা চুরি করে।
এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি রব্বানীর বড় খালা দেখে ফেললে তাকে গালাগালি ও বকাবকি করেন। বলেন, ‘তোর স্বভাব ভালো হবে না, তুই চুরি করার জন্য আমার বাসায় আসছিস, তোর মাকে এখনই জানাচ্ছি;। তখন তার খালা তার মাকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল খুঁজতে থাকেন। সেই মুহূর্তে সে ডাইনিং টেবিলে থাকা লেবু কাটার ছুরি দিয়ে প্রথমে বড় খালার পেটে আঘাত করে। তখন বড় খালা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মারতে উদ্যত হলে সে পুনরায় আঘাত করে। তার বড় খালার বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করলে শব্দ শুনে সেজো খালা (সুফিয়া) পেছনের অন্য একটি রুম থেকে এসে তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপর সে ওই একই চাকু দিয়ে সেজো খালার পেটে একবার আঘাত করলে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। বড় খালা তখনো চিৎকার করছিলেন।
চিৎকার থামাতে সে রান্নাঘরের চুলার পাশ থেকে শিলপাটা এনে বড় খালার মাথায় একাধিকবার আঘাত করে। পরে সেজো খালাকেও আঘাত করে। তারপর সে বাথরুমে গিয়ে হাত ও মুখে লেগে থাকা রক্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করে।
পাশের রুমে গিয়ে সে টিশার্ট ও জিন্স প্যান্টে রক্ত লেগে থাকায় পরিবর্তন করে খালাতো বোন মিষ্টির ব্যবহৃত একটি জিন্স প্যান্ট ও তার ব্যাগে থাকা আরেকটি রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরে। সে দরজা বাইরে থেকে তালা মেরে চাবি নিয়ে বের হয়ে শনির আখড়ায় যাওয়ার জন্য রাস্তায় এসে সিএনজিতে ওঠে।
শনির আখড়া পৌঁছার পর চুরি করা ৩ হাজার টাকা থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে সিএনজি ভাড়া দেয় এবং বাকি টাকায় রক্ত লেগে থাকার কারণে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম জানান, পরদিন ১০ মে বিকেলে তার সেজো খালাকে দাফন করার জন্য তার নানুর বাড়ি ঝালকাঠির উদ্দেশে রওয়ানা করে সে। পরে ১১ মে (রোববার) বিকেল সাড়ে ৩টায় ডিবি মিরপুর বিভাগের একটি টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুই খালা হত্যায় জড়িত শিশু ভাগনেকে ঝালকাঠি সদরের নানুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
পরে তার স্বিকারক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গা থেকে আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার রব্বানি সোমবার চুরির ঘটনায় তার আপন দুই খালাকে হত্যা করার বিষয়ে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ ঘটনায় ভিকটিম মরিয়ম বেগমের মেয়ে নুসরাত জাহান বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা তদন্ত করছে পুলিশ।
আই/এ