বর্তমান যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস, বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যবহার ছাড়া দিন কল্পনাই করা যায় না। তবে এই প্রযুক্তি নির্ভরতার পেছনে লুকিয়ে আছে মারাত্মক কিছু কুফল, যা অনেকেই গুরুত্ব দিয়ে ভাবেন না।
জার্মানির হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব কোলনের গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ রাখলেই মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় চোখে পড়ার মতো ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মনোযোগহীনতা, মানসিক চাপ, অনিদ্রা এমনকি স্থূলতার কারণ হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে উঠে এসেছে “ফোন ডায়েট” বা “ডিজিটাল ডায়েট” নামক নতুন অভ্যাস।
ফোন ডায়েট কি-
ফোন ডায়েট বলতে স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা বোঝায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া, ই-মেইল, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহারের সময়সীমা এক ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। পাশাপাশি সপ্তাহে এক দিন ফোনকে ছুটিতে পাঠানো অর্থাৎ, ওই দিন জরুরি কল ছাড়া অন্য কোনো কাজে ফোন ব্যবহার না করাই এই ডায়েটের মূল উদ্দেশ্য।
ফোন ডায়েটের সুফল
ফোন ডায়েট শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার সীমিত করাই নয়, এর রয়েছে একাধিক ইতিবাচক দিক। যেমন:
১. সময় ও গুরুত্বের বাছাই:
দিনে মাত্র এক ঘণ্টা সময় নির্ধারণ করলে, ব্যবহারকারী কেবল গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ফোন ব্যবহার করেন।
২. মনোযোগ বৃদ্ধি:
মনোযোগের স্থায়িত্ব বাড়ে, ফলে যে কোনো কাজেই মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
৩. বিভ্রান্তি কমে:
‘ডিসট্রাকশন’ কমে গিয়ে কাজের গতি বাড়ে।
৪. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন:
ফোন ও স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো কম পাওয়ার ফলে ঘুমের মান ভালো হয়, ঘুমাতে ও উঠতে নিয়ম মেনে চলা যায়।
৫. খাওয়ার সময় মনোযোগ:
গবেষণা বলছে, ফোন স্ক্রল করতে করতে খাওয়ার ফলে খাবারে মনোযোগ থাকে না, যা স্থূলতার দিকে ঠেলে দেয়।
৬. সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন:
ফোন ডায়েটের ফলে পরিবার ও কাছের মানুষের সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটানো যায়। মানসিক শান্তি ও সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে।
৭. চোখ, মস্তিষ্ক ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি হ্রাস:
দীর্ঘ সময় স্ক্রিন ব্যবহারে চোখ ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ফোন ডায়েট কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
সুস্থ, সুশৃঙ্খল ও মানসিকভাবে প্রশান্ত জীবনযাপনের জন্য এখন সময় এসেছে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনার। স্মার্টফোনের ‘ডায়েট’ মানে প্রযুক্তিকে বাদ দেওয়া নয় বরং, তাকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করে জীবনের গুণগত মান বাড়ানো।
এসকে//