জাতীয়

আওয়ামী লীগের খবর প্রকাশ করলেই শাস্তি!

বায়ান্ন প্রতিবেদন

‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর আওতায় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্তের গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। নতুন এই আইনের আওতায় দলটির পক্ষে বা সমর্থনে যেকোনো প্রচার, বক্তৃতা, সভা-সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গেজেট অনুযায়ী, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৬ নং আইনের ধারা ২০-এর (খ) উপধারা (১)-এর দফা (ঙ)-তে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো নিষিদ্ধ ‘সত্তা’র পক্ষে বা সমর্থনে প্রচারমূলক যেকোনো কার্যক্রম—যেমন প্রেস বিবৃতি, গণমাধ্যমে প্রচার, অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ, কিংবা মিছিল/সমাবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

এই আইন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নাম বা কার্যক্রম গণমাধ্যমে প্রচার করলে সংশ্লিষ্ট মিডিয়াও শাস্তির আওতায় পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

তিনি বলেন, “সত্তা ও সংগঠন একই বিষয়। এনটিটি (Entity) বলতে রাজনৈতিক দলই বোঝানো হয়েছে। নতুন গেজেটে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে এটির যে কোনো প্রচারকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।”

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৯ ধারার ১, ২ ও ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থনে সভা আয়োজন করেন, বক্তব্য দেন, কিংবা রেডিও, টেলিভিশন বা অনলাইন মাধ্যমে কিছু প্রচার করেন, তাহলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের শাস্তি সর্বনিম্ন দুই বছর ও সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, আওয়ামী লীগের কোনো দিবস, বার্ষিক অনুষ্ঠান বা অন্য কোনো কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ করা হলে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমনকি ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যদি ৭ মার্চের ভাষণের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করতে হয়, তবে তা 'কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ হিসেবে উল্লেখ করেই করতে হবে। অন্যথায় আইনি ঝুঁকি থেকে যায়।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি প্রথম ২০০৯ সালে চালু হয়েছিল। যদিও ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু ২০০৮ সালের ১১ জুন থেকে কার্যকারিতা ধরা হয়। পূর্ববর্তী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড বন্ধের কথা বলা থাকলেও নির্দিষ্টভাবে সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল না। এবার সেটি স্পষ্টভাবে সংযোজন করে নতুন গেজেট জারি করা হয়েছে।

নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, শুধু আওয়ামী লীগই নয় যে কোনো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সত্তার পক্ষে প্রচার, সমর্থন আহ্বান, বা সংবাদ প্রকাশ সম্পূর্ণভাবে আইনত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই গেজেট কোনোভাবেই দেশের অন্য রাজনৈতিক দল বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপের যৌক্তিক, গঠনমূলক বা আইনানুগ বিশ্লেষণ এই অধ্যাদেশ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হবে না।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ #অন্তর্বর্তীকালীন সরকার