দেশজুড়ে

মহেশখালীতে প্যারাবন দখল নিয়ে নীরব প্রশাসন

কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ প্যারাবন দিন দিন দখলের কবলে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি যেখানেই বাড়ছে, সেখানে এই প্যারাবন পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। অথচ এ বোন রক্ষায় নীরব বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।

 সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, প্রভাবশালী মহল দ্বারা এই বনভূমি দখলের প্রচেষ্টা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গাছ কেটে বা পলিথিন দিয়ে জায়গা ঘিরে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া আগুন দিয়েও বনভূমি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই চরম পরিবেশ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক সময় এসব দখল প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তিরও পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। প্যারাবন রক্ষায় প্রশাসনের আরও সক্রিয় ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

সরকার পতনের দশ মাস পার হলেও মহেশখালীতে প্যারাবন ধ্বংস ও জমি দখলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের নীরবতা দখলদারদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের দায়ের করা মামলাগুলোর তোয়াক্কা না করে ইতোমধ্যে মহেশখালীতে প্রায় ৩০০ একরের বেশি ম্যানগ্রোভ বন দখল করেছে প্রভাবশালী চক্র। সোনাদিয়া এলাকায় বেজার নিয়ন্ত্রিত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার একর জমির বড় অংশই এখন দখলদারদের কবলে। এর মধ্যে অন্তত ৪৭টি চিংড়িঘের গড়ে তোলা হয়েছে শুধু সোনাদিয়াতেই।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, প্যারাবনের ওপর নির্মিত হয়েছে একাধিক ঘের, লবণের মাঠ এবং খননযন্ত্র দিয়ে গাছ কেটে বন উজাড় চলছে। বন বিভাগের অভিযান শুধু নাটকীয়তায় সীমাবদ্ধ। মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও প্রশাসন গ্রেপ্তারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আগাম জামিন নিয়ে দখলদাররা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আইনের শাসন এখন যেন দখলদারদের বাগানে পরিণত হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পানিরছড়ার পশ্চিমে সরকারি খাল ও প্যারাবন দখলে (জাপাপন্থি) অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিনকে ৪ আনা শেয়ার দিয়ে চিংড়িঘের নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা এতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং প্রশাসনের একাংশ ঘুষ খেয়ে বিষয়টি আড়াল করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আদালত ও থানায় একাধিক মামলা হলেও এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আদালতে করা মামলায় আসামি করা হয়েছে হোয়ানকের অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন, মো. ইসহাক, ছদর আমিন, বড় মহেশখালীর মারুফুল হকসহ আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, মহেশখালীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ প্যারাবন নিধন, দখল এবং গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছে গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের দায়িত্বকালে। মাত্র দুই বছরের চাকরি জীবনে বিতর্কের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২৩ সালে বিদায় নেন। স্থানীয় পুলিশ এবং বন বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজকরে প্যারাবনের বিশাল অংশ দখল করে নেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ এবং প্রভাবশালীদের ছায়া ও সহযোগিতা পেয়েই এমন দুর্বার আগ্রাসন চালানো সম্ভব হয়েছে।

উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আইয়ুব আলী বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রক্রিয়াধীন। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সোনাদিয়া ছাড়া নতুন করে ৩০০ একরের বাইরে কোনো দখলের তথ্য আমার কাছে নেই।

তিনি দাবি করেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে বন বিভাগ জিরো টলারেন্সনীতি অনুসরণ করছে।

যদিও বাস্তবে তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই, বরং স্থানীয়দের মধ্যে প্রশাসনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

 

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #মহেশখালী #প্যারাবন