সম্প্রতি চলন্ত ট্রেন থেকে এক ব্যক্তিকে ফেলে দেয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান (৫২)। যিনি জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা করেন। তিনি জানান, পূর্ববিরোধের কারণে কয়েকজন যুবক তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল।
মতিউর রহমান বর্তমানে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পাড়ইল ফকিরপাড়া গ্রামের বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর ১২টার দিকে গণমাধ্যমকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
মতিউর জানান, গেল শনিবার তিনি বগুড়ায় তার মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। পরের দিন রোববার দুপুর ১১টার দিকে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ট্রেন আসলে তিনি যে বগিতে উঠেন, ওই একই বগিতে দুই যুবক ওঠে। যারা মাস্ক পরা ছিল। সেদিন ট্রেনে তেমন ভিড় ছিল না এবং ট্রেন তালোড়া স্টেশনে থামলে আরও যাত্রী নামলে বগিটি আরও ফাঁকা হয়ে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর ওই দুই যুবক এসে তার পাশে বসে এবং বাসার ঠিকানা ও অন্যান্য বিষয় জানতে চান। মতিউর তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেন। কিছুক্ষণ পর ওই দুই যুবক চলে যায়।
তবে মতিউর তখনও বুঝতে পারেননি তারা তাকে মারার জন্য অনুসরণ করছে। পরে ট্রেনটি আলতাফনগর স্টেশনে থামলে সেখানে মাস্ক পরা আরও পাঁচ যুবক তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ট্রেনটি আলতাফনগর স্টেশন ছাড়ার পর সাত যুবক একযোগে মতিউরকে মারধর করতে শুরু করে। তারা অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে মতিউর দুটি মোবাইল চুরি করেছেন।
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মতিউর একজন যুবকের মাস্ক টান মেরে খুলে ফেলেন। ফলে তিনি ওই যুবককে চিনতে পারেন।
এরপর যুবকরা সিদ্ধান্ত নেয় তাকে মেরে ফেলতে হবে। তারা প্রথমে চাকু বের করে তাকে আঘাত করতে চেয়েছিল এবং ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এক যুবক বলে, চাকু মারলে আমরা ফেঁসে যাব, একে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিই তাহলে মানুষ ভাববে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে।
মতিউর আরও বলেন, তখন আমি ট্রেনের দরজার রড ধরে ঝুলে বাঁচার চেষ্টা করি। তারা আমাকে ফেলে দেওয়ার জন্য একের পর এক ধাক্কা দিতে থাকে। প্রায় ৪ থেকে ৫ মিনিট তিনি আলতাফনগর থেকে নশরতপুর পর্যন্ত ট্রেনের বাইরে ঝুলে ছিলেন।
শেষে ট্রেন নশরতপুর স্টেশনে পৌঁছালে মতিউর রহমান প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। স্টেশনে উপস্থিত লোকজন তাকে কুঁজো হয়ে থাকতে বলেন, যা শুনে তিনি সেভাবেই পড়ে থাকেন। আল্লাহর রহমতে, তার প্রাণ রক্ষা পায়। তবে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তার পিঠ ও পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে এবং তিনি অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েন। কোনও কথা বলার ক্ষমতা ছিল না। পরে তার পরিবার তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মতিউর জানান, তিনি যাকে চিনতে পেরেছেন তার নাম সুমন (৩০)। তিনি আদমদীঘি উপজেলার দহরপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। সুমনের ভগ্নীপতি সজীব কিছুদিন আগে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে গিয়ে তার কাজের সমস্যা হয়। সজীবের শ্যালক সুমন মতিউর রহমানকে দোষারোপ করে আসছিল। এই বিরোধের জেরেই সজীবের শ্যালক সুমন ও তার সঙ্গীরা তাকে মিথ্যা অভিযোগে মারধর করে এবং ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।
ঘটনার পর রোববার দুপুরে সান্তাহারগামী চলন্ত ট্রেনে মতিউর রহমানের ঝুলে থাকা। এই ঘটনার একটি ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনা নিয়ে পরদিন সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সৌদিপ্রবাসী সজীবের বাবা হেলাল উদ্দিন বলেন, ৪০ দিন আগে মতিউরের মাধ্যমে সজীবকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত সে কাজের সুযোগ পায়নি। এই ঘটনায় আমাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।
মতিউর রহমান পরবর্তী সময়ে সান্তাহার জিআরপি থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সুমনকে। এছাড়াও আরও ছয়-সাতজন অজ্ঞাতনামা যুবককে আসামি করা হয়েছে।
সান্তাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হাবিবুর বলেন, মামলার পর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এসকে//