সার্কাস ও যাত্রাপালা বন্ধ হওয়ায় বিপাকে আছেন প্রতিবন্ধী শাহজাহান আলী। একমাত্র মুদি দোকনাকে সম্বল করে করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু বেচা বিক্রি কম হওয়ায় এটি দিয়েও জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের শাহজাহান আলীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
নিজের অবস্থা বর্ননা করতে গিয়ে শাহজাহান জানান, গেল ঈদে স্ত্রীর নতুন কাপড়চোপড় ও একমাত্র সন্তানের নতুন শার্ট প্যান্ট কিনে দিতে পারেন নি। এখন আবার আসছে কোরবানির ঈদ আসছে। স্ত্রীকে নতুন কাপড়চোপড় কিনে দিতে না পারলেও সে কখনও কষ্ট পাবে না। কিন্তু একমাত্র সন্তানকে যেহেতু গেল ঈদে নতুন শার্ট প্যান্ট দিতে না পাড়ায় এই ঈদে নতুন শার্ট প্যান্ট- কিনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কথা কতটুক রাখতে পারবেন তা নিয়ে তিনি চিন্তায় আছেন।
তিনি বলেন, ঘরে নেই জমানো টাকা পয়সা নেই। সংসারে আয় বলতে নিজের প্রতিবন্ধী ভাতা টুকুই সম্বল। সেই সাথে বাড়ির পাশে ছোট একটি মুদি দোকান দিলেও বেচাবিক্রি কম হওয়ায় একেবারে সামান্য আয়। দিনে এই দোকান থেকে আয় মাত্র ১০০ থেকে দেড়শত টাকা আয়। কোন কোন দিন ৫০ টাকাও আয় হয় না।
সামান্য আয়ে যেখানে স্ত্রী সন্তানদের মুখে ডাল ভাত জোটে না। সেখানে এই ঈদে সন্তানের নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়া ও পরিবারের সদস্যদের মুখে এক টুকরো মাংস খাওয়াতে পারবো কি না এই চিন্তায় বাকরুদ্ধ হয়ে দিন পাড় করেছেন শাহজাহান আলী।
দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বিভিন্ন সার্কাস দলে ও যাত্রাপালায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শাহজাহান। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তার পরিবার কোন ধরণের খোঁজ খবর নেয় না। তার বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকে বুলবুল, রওশন, সোনারবাংলা সার্কাসসহ একাধিক যাত্রাপালায় অভিনয় করে জীবন জীবিকার নির্বাহ করেছেন।
প্রায় ২০ বছর অনেক কষ্ট করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
শাহজাহানের ছেলে ও চতুর্থ শ্রেনির শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবার হাতে এখন টাকা নেই। টাকার অভাবে গত ঈদে নতুন জমা কিনে দিতে পারেনি। যদি সরকার আমার প্রতিবন্ধী ভাতা করে দিতো তাহলে আমার নতুন জামাও কেনা হতো এবং আমার পড়াশুনার খরচও হতো। সেই সাথে সরকার যদি আমাদের দোকানের ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে আমরা একটু খেয়ে পড়ে ভালো থাকতে পারতাম’।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ওই পরিবারের যে কেউ সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করলে বামন প্রকৃতির শিক্ষার্থী তাজুল ইসলামের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এছাড়া ওই পরিবারটিকে বিভিন্ন ধরণের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেন ইউএনও।
আই/এ