বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। যার মধ্যে ব্ল্যাকমেইলিং একটি গুরুতর সমস্যা। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য এবং ছবি ভিডিও সংগ্রহ করে অনেকেই ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন। প্রযুক্তি যেমন উন্নত হচ্ছে, তেমনি ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঘটনাও বেড়েছে। ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হলে যেভাবে প্রতিরোধ এবং আইনি ব্যবস্থা নেবেন তা জানা জরুরি। ব্ল্যাকমেইলিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে প্রধান দুটি ধরন রয়েছে।
অনলাইন ব্ল্যাকমেইল
সাইবার অপরাধীরা সাধারণত অনলাইনে যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম থেকে ছবি বা ভিডিও সংগ্রহ করে, সেগুলো ম্যানিপুলেট করে বিকৃত ছবি বা ভিডিও তৈরি করে। তারপর তারা ফেক আইডি খুলে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। তাদের দাবি থাকে এসব ছবি বা ভিডিও যদি না সরানো হয়, তবে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্ল্যাকমেইল
কোনও সম্পর্কের মধ্যে ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ধারণ করা হয়, যা পরে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এমনকি স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে অনেক সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।
ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হলে যা করবেন-
ভয় না পেয়ে শান্ত থাকা:
প্রথমেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভয় না পাওয়া। ব্ল্যাকমেইলাররা সাধারণত ভয় দেখিয়ে তাদের দাবিগুলো মানাতে চেষ্টা করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আপনার আত্মবিশ্বাস হারানো ঠিক হবে না। বরং, আপনি শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন।
সব প্রমাণ সংরক্ষণ করা:
ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত সব প্রমাণ সংরক্ষণ করুন। যেমন, ব্ল্যাকমেইলারের পাঠানো হুমকির স্ক্রিনশট, চ্যাট, কল রেকর্ড, ছবি, ভিডিও এবং তার সোশ্যাল মিডিয়া আইডি লিংক। এগুলো আইনি পদক্ষেপ নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আইনি পদক্ষেপ নেওয়া:
যদি আপনি ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধ: যদি ব্ল্যাকমেইলে পর্নোগ্রাফি বা অশালীন ভিডিও বা ছবি জড়িত থাকে, তবে এটি পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা যাবে।
• থানায় অভিযোগ দায়ের করা: আপনি সরাসরি থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
• সাইবার ট্রাইব্যুনাল: সাইবার অপরাধের জন্য বিভাগীয় শহরে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা যায়।
• নারী সুরক্ষা ইউনিট: নারী ভুক্তভোগীরা নারী সুরক্ষা ইউনিটে গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন।
• ৯৯৯ হটলাইন: যে কোনও জরুরি অবস্থায় আপনি ৯৯৯ হটলাইনে কল করে সাহায্য নিতে পারেন।
বিশেষ করে টিনএজারদের মধ্যে এই ধরনের অপরাধের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই অভিভাবকদের উচিত, সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক স্থাপন করা এবং তাদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন রাখা। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং সন্তানদের গোপনীয়তার বিষয়ে সতর্ক করুন।
ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ান:
যদি আপনার আশপাশে কেউ ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে থাকে, তবে তাকে দোষারোপ না করে সহানুভূতির সঙ্গে পাশে দাঁড়ান। তার আইনি পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করুন এবং তাকে মানসিকভাবে সমর্থন দিন।
সমাজের চাপের কথা ভাববেন না:
আমাদের সমাজে অনেক সময় ‘কে কি বলবে’ এই চিন্তা মাথায় থাকে, তবে এরকম চিন্তা করে অপরাধীদের ছাড় দেওয়া উচিত নয়। অপরাধী যে কারো হতে পারে, কিন্তু আপনি যদি সঠিক পথে আইনি পদক্ষেপ নেন, তবে আপনি নিরাপদ থাকবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত-
প্রাইভেসি সেটিংস শক্তিশালী করুন:
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময় আপনার প্রাইভেসি সেটিংসকে যথাসম্ভব শক্তিশালী রাখুন। এতে করে আপনি আপনার পোস্টগুলো শুধু নির্দিষ্ট মানুষের জন্য পাবলিশ করতে পারবেন, যাতে অচেনা কেউ আপনার ছবি বা ভিডিও দেখতে না পারে।
অপরিচিতদের থেকে সতর্ক থাকুন:
সোশ্যাল মিডিয়াতে অপরিচিতদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে সতর্ক থাকুন। অপরিচিত কেউ যদি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়, তবে তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
সন্দেহজনক গ্রুপ বা পেইজে যোগদান করবেন না:
যদি আপনি কোনও সন্দেহজনক গ্রুপ বা পেইজ দেখেন, তবে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। এতে আপনার তথ্য ও ছবি সুরক্ষিত থাকবে।
অফলাইন সুরক্ষা:
পাবলিক টয়লেট, হোটেল বা ট্রায়াল রুমে গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে আপনার ছবি বা ভিডিও ধারণ হতে পারে। এমন স্থান থেকে সচেতন থাকুন এবং সর্বদা নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
ছবি বা ভিডিও আপলোডের আগে যাচাই করুন:
কোনও ছবি বা ভিডিও আপলোড করার আগে যাচাই করে নিন, যে কেউ তা দেখতে পারছে কিনা। আপনার পোস্ট বা ছবি শুধুমাত্র আপনার পরিচিতদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখুন।
ব্ল্যাকমেইলিং এক ধরনের অপরাধ যা মানুষের ব্যক্তিগত জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে আপনি যদি সঠিক সময়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং সচেতন থাকেন তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি আপনি সময়মতো আইনি সহায়তা নেন এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাহলে সাইবার অপরাধীরা কখনোই আপনার শান্তি নষ্ট করতে পারবে না।
এসকে//