পাবনার সকল হাটে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর বেচা কেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে বেশ সরগরম বিভিন্ন পশুর হাটগুলো। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বেধে দেওয়া নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করে প্রতিটি হাটে ইচ্ছেমতো হাসিল আদায় করা হচ্ছে।
সোমবার (২ জুন) পাবনা সদর উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুরাদ হোসেন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনার জেলার প্রতিটি গরুর হাটে বড় গরু ৬৫০ টাকা করে। ছোট গরু ৪৪০ টাকা। মহিষ ৭৫০ টাকা। বড় ছাগল ২৪০ টাকা আর ছোট ছাগল ১৮০ টাকা করে নির্ধারণ করা হলেও কোনটির তোয়াক্কা করছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারবাড়িয়া মাদরাসা গরুর হাটে ব্যাপক পরিমাণ গরু মহিষ ও ছাগলে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। হাটে দাঁড়ানোর মত কোন জায়গা নেই। হাটে বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর চাহিদা বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার তুলনামূলক দাম কম বলে বিক্রেতারা জানান।
প্রতিটি গরু বড় ৬৫০ টাকার পরিবর্তে ১২০০ টাকা। ছোট গরু ৪৪০ টাকার পরিবর্তে ১০০০ টাকা। ছাগলের ২৪০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ টাকা, ছোট ছাগলের ৫০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। আবার কোন কোন গরু থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্তও হাসিল আদায় করতে দেখা গেছে।
এরপর বিষয়টি ভূক্তোভোগীরা পাবনার জেলা প্রশাসককে অবগত করলে উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) মুরাদ হোসেনের নেতৃত্ব একটি টিম হাটে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরপর হাটে মাইকিং করে বড় গরু সরকার নির্ধারিত রেট ৬৫০, মহিষ ৭৫০ ও ছাগল ২৪০ টাকা হাসিল আদায় করা হয়।
পাবনার আতাইকুলা থেকে কোরবানির গরু কিনতে আসা মেছের উদ্দিন। তিনি বলেন, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম। কিন্তু হাসিল নিয়েছে ১২০০ টাকা। আসলে এই হাটে আগে কম টাকা হাসিল আদায় করা হতো। অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় অনিয়ম ও সরকারি রেটের তোয়াক্কা করছে না। অল্প দিনে এই হাটটি ব্যাপক জনপ্রিয় পাওয়ায় স্বেচ্ছাচারিতা বেড়ে গেছে। এখন থেকে এই হাটে আসা বাদ দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলেও এই হাটে এতো টাকা হাসিল নেওয়া হয়নি। তাহলে জীবন দিয়ে কি লাভ হলো। কোন পরিবর্তন নেই।
পাবনার ভাঁড়ারা থেকে এসেছেন মো: আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে গরু কিনতে আসছি। ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটু ছোট গরু কিনেছি। তবে হাসিল নেওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। কিন্তু আমাদের থেকে ১২০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। আমরা দিতে চাইনি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে।
এদিকে হাসিল আদায়কারী সাংবাদিকদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করা সুজানগর পৌর যুবদলের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ঈদের সময় অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছি। কয় টাকা নিতে হবে আমাদের কেউ নির্ধারণ করে দেয়নি। ইউএনও আমাদের থেকে হাট ইজারাদার বাবদ ৮৩ লাখ টাকা নিয়েছেন কিন্তু তিনি আমাদের কোন চিঠি দেননি কত টাকা নিতে হবে।
তারাবাড়িয়া মাদরাসা হাট ইজারাদার ও সুজানগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রইজ উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমরা সরকার থেকে কোটি টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছি। বেশি টাকা না নিলে হাটের টাকা উঠবে না। আর ঈদের সময় একটু বেশি নিতে হয়। সারা বছর তো বেশি নিতে পারিনা।
পাবনা সদর উপজেলা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী মেজিষ্ট্রেট মুরাদ হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগে হাটে অভিযান পরিচালনা করে সত্যতা পাওযায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মাইকিং করে সরকার নির্ধারিত টাকা হাসিল আদায়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে যদি এমন অভিযোগ পাই তাহলে বড় ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রশাসনের নজরদারি ব্যাপক বাড়ানো হবে। কেউ অতিরিক্ত হাসিল নিলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
আই/এ