সুনামগঞ্জে গেল দুই দিন ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় নদী ও হাওরের পানি স্থিতিশীল ছিল। তবে সুরমা নদীর পানি গেল ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর পরিস্থিতি বিবেচনায় আবার যদি ভারী বৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ঢল নামে, তাহলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৬.৯৭ মিটার, যা রবিবার (১ জুন) ছিল ৬.৮৬ মিটার। বর্ষা মৌসুমে সুরমা নদীর বিপদসীমা ৮.৮০ মিটার। এই অবস্থায়, সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩০ মিলিমিটার। তবে চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির পরিমাণ কম ছিল।
এদিকে জগন্নাথপুর উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এলাকার বেশ কিছু গ্রাম ও হাটবাজার প্লাবিত হয়ে গেছে।
বিশেষ করে পাইলগাঁও ইউনিয়নের অলইতলী গ্রামে সড়ক ভেঙে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে গেছে এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় গ্রামীণ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শিক্ষার্থীসহ এলাকার সাধারণ জনগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
স্থানীয় কদরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে রাস্তাঘাট ভেঙে পানি ঢুকছে এবং সড়কে পানি উঠে গেছে।
পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নজমুদ্দিন জানান, কুশিয়ারার পানি বেড়ে জগন্নাথপুর–বেগমপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক গ্রামীণ সড়কসহ কিছু বাড়িতে হাঁটুসমান পানি জমে গেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ জানান, আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কেউ সেখানে আশ্রয় নেয়নি।
এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় নদী ও হাওরের পানি বাড়তে থাকায় বন্যার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পাঁচ উপজেলার নদ-নদী এবং হাওরে পানি বাড়ছে। ছাতক উপজেলার নদ-নদী পানিতে ভরে গেছে। সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও পানি রয়েছে। তবে গেল দুই দিন সুনামগঞ্জ ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় উজানের ঢল কিছুটা কমেছে, যার ফলে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমেছে।
পাউবো কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, যার ফলে নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে পারে এবং বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে আপাতত বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
সদর উপজেলার বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, ঈদ আর কিছুদিন বাকি। এই কদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পশুরহাটগুলো জমেনি। যদি আবহাওয়া ভালো না থাকে তাহলে গরু ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। গত ৭২ ঘণ্টা সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তবে এখন মনে হচ্ছে সেই ব্যবস্থা নেবার প্রয়োজন নেই।
সুনামগঞ্জে ২০ মে থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি পরবর্তীতে ভারী হয়ে ওঠে। সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল নেমে পানি বাড়তে থাকে নদী ও হাওরে।
এসকে//