আন্তর্জাতিক

গাজায় ঈদেও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১১৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ছবি: আনাদোলু এজেন্সি

গাজাবাসীর জন্য ঈদ আর উৎসব নয়, বরং বেঁচে থাকার লড়াই। চারপাশে ধ্বংসস্তূপ, শোকে মুহ্যমান মানুষ আর ক্ষুধার্ত শিশুরা যেন গাজার প্রতিদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে।

গাজায় হামাসকে উৎখাত ও জিম্মিদের উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা অব্যাহত রয়েছে। দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে এই সামরিক অভিযান। আকাশ ও স্থলপথে একযোগে চালানো হামলায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা।

নিরাপদ আশ্রয়ের কোনো স্থান আর অবশিষ্ট নেই। খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও করুণ করে তুলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি, থমকে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন।

এমনকি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার দিনেও থেমে থাকেনি হামলা। ঈদ ও পরদিন মিলিয়ে অন্তত ১১৭ জন নিরপরাধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। শিশু, নারী ও বয়স্কদেরও রেহাই দেয়নি এই বর্বর হামলা।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাতেও ৬ জুন পালিত হয়েছে ঈদুল আজহা। কিন্তু উৎসবের এই দিনেও রক্তাক্ত অধ্যায় লিখেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ঈদের দিন শুক্রবার (০৬ জুন) দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪২ জন ফিলিস্তিনি। এর পরদিন শনিবার (০৭ জুন), বিমান বাহিনীর টানা গোলাবর্ষণে গাজা জুড়ে নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭৫ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ১০০ জন।

রোববার (০৮ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে।

ঈদের পরদিন নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।

ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেন, বিমান অভিযানের আগে কোনো সতর্ক সংকেত বা সাইরেন দেয়নি ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। তিনি আরও জানান, শনিবারের হামলায় অন্তত ৮৫ জন ধ্বংস্তূপের তলায় আটকা পড়েছেন। তাদের উদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, এটা ছিল পুরোপুরি ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা। শনিবার যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু আছেন।

গাজা সিটির বাসিন্দা হামেদ কেহিল বলেন, অন্যান্য বছর এ সময় আমরা সকাল সকাল উঠে নিজেদের এবং বাচ্চাদের নতুন পোশাকে সাজিয়ে বন্ধু-আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। আর এবার আমরা আমাদের শিশু ও স্বজনদের লাশ বহন করছি। গতকাল ভোররাতে আমাদের ঘুম ভেঙেছে হামলা, ধ্বংস আর আর্তনাদের শব্দে।

গাজা সিটির আরেক বাসিন্দা হাসান আলখোর বলেন, দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী যা যা করেছে, সেজন্য যেন নেতানিয়াহুকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হয়।

এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল আসাদ আবু শারিয়া নামের এক হামাস নেতাকে নিধন করা। আসাদ আবু শারিয়া হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধান ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল হামাস, তাতে অংশ নিয়েছিলেন।

এর আগে ঈদের দিন, অর্থাৎ ৬ জুনও দিনভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাতে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৪২ জন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাজায় ভয়াবহ এক অভিযানে নামে ইসরায়েলি বাহিনী। দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দুমাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সব মিলিয়ে গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসেও (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের হয়েছে। তবে, নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #গাজা #ইসরাইল #ঈদ