লাইফস্টাইল

চিন্তা যখন অতিরিক্ত হয়ে ওঠে : প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের উপায়!

বায়ান্ন লাইফস্টাইল ডেস্ক

আজকের যুগে এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর যে চিন্তা করেন। তবে কি জানেন, এই অতিরিক্ত চিন্তা শুধু অসুবিধা নয় বরং এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুতর ঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত চিন্তা যখন দীর্ঘদিন ধরে চলে তখন এটি অ্যাক্সিয়েটি (উদ্বেগ), ডিপ্রেশন (দুঃখবোধ) এবং অন্যান্য মানসিক ব্যাধির সৃষ্টি করতে পারে। এই চিন্তার চক্রটি এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল ট্র্যাপ হয়ে দাঁড়ায়। যা কোনও পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হন এবং একই বিষয়ের উপর বারবার চিন্তা করতে থাকেন।

আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী ড. মার্থা বেক বলেছেন,অতিরিক্ত চিন্তা অনেক সময় দুশ্চিন্তা এবং মানসিক ক্লান্তির জন্ম দেয়। যখন আমরা অতিরিক্ত চিন্তা করি, তখন আমাদের মস্তিষ্ককে অবিরত চাপের মধ্যে রাখতে হয়। যা অবশেষে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

অতিরিক্ত চিন্তা শারীরিকভাবে আমাদের শরীরেও প্রভাব ফেলতে পারে। মস্তিষ্ক যখন একটানা চিন্তা করতে থাকে, তখন এটি অ্যাড্রেনালিন এবং কোর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই হরমোনের উচ্চমাত্রা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। ফলে শরীরে মেটাবলিক পরিবর্তন, অ্যাজমা বা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

নিউ ইয়র্ক মেডিক্যাল কলেজের একজন বিশেষজ্ঞ ড. হ্যারি মেলভ্যান বলেছেন,অতিরিক্ত চিন্তা এবং উদ্বেগ আমাদের হৃদপিণ্ডের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করে, যা ধীরে ধীরে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

তবে অতিরিক্ত চিন্তা কমানোর জন্য কিছু বিশেষজ্ঞের মতামত ও কৌশল রয়েছে। 

চিন্তা করা বন্ধ করার কৌশল: 

এটি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আপনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন যে, আর কিছু চিন্তা করবেন না। যদি কোনও চিন্তা মাথায় আসেই, তবে আপনি নিজের মধ্যে বলুন, ‘স্টপ!’ এবং চেষ্টা করুন অন্য কোনও বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে। 

পরিকল্পনা তৈরি করা: 

যে সমস্যাগুলো নিয়ে আপনি বেশি চিন্তা করছেন, সেগুলোর জন্য স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা তৈরি করুন। পরিকল্পনা থাকা মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং অতিরিক্ত চিন্তা কমায়।

ব্যায়াম এবং আউটডোর একটিভটি: 

শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা অতিরিক্ত চিন্তা কমানোর জন্য এক কার্যকরী উপায়। আমেরিকান সাইকোলজিস্ট ড. রেবেকা হান্ট বলেন, যত বেশি আমরা শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক ততই চাপমুক্ত থাকে এবং অতিরিক্ত চিন্তা থেকে দূরে থাকে।

আত্মসমালোচনা: 

আমরা অনেক সময় নিজেদের প্রতি অত্যধিক কঠোর থাকি এবং ছোট ছোট সমস্যায় অতিরিক্ত চিন্তা করি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া শেখা দরকার। নিজের প্রতি সদয় হয়ে চিন্তাভাবনা করার মাধ্যমে অতিরিক্ত চিন্তা কমানো সম্ভব।

অতিরিক্ত চিন্তা শুধু সমস্যা নিয়ে চিন্তা করাই নয়, এটি নেগেটিভ চিন্তা এবং ইন্ট্রোসপেকশন (নিজের ভাবনা ও অনুভূতির গভীরে প্রবেশ করা) এর একধরনের অতিরিক্ততা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব চিন্তায় আটকে যাওয়ার ফলে ব্যক্তি বাস্তবতার সাথে মেলবন্ধন হারিয়ে ফেলেন এবং তাদের নিজের পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম হন না।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. মাইকেল জনসন বলেন, অতিরিক্ত চিন্তা একধরনের মানসিক আত্মবিশ্বাসের অভাব হতে পারে। মানুষ যখন নিজের আত্মবিশ্বাস এবং শারীরিক ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দিহান থাকে, তখন তারা অতিরিক্ত চিন্তা করতে থাকে এবং সেই চিন্তা তাদের মনের মধ্যে প্রতিনিয়ত ঘুরতে থাকে।

আজকের ডিজিটাল যুগে যেখানে তথ্য প্রবাহ অগণিত এবং বহুলাংশে বিভ্রান্তিকর, সেখানে অতিরিক্ত চিন্তা করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফোন, ল্যাপটপ, সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ আপডেট এই সবই আমাদের মস্তিষ্কের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। গবেষকরা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ এর প্রয়োজন, যা আমাদের অতিরিক্ত চিন্তা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। 

মনোবিজ্ঞানী ড. এলিজাবেথ গর্ডন বলেন,টেকনোলজি ব্যবহারের সময় সীমাবদ্ধতা রেখে মস্তিষ্কের চাপ কমানো যায় এবং এর মাধ্যমে চিন্তার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

অতিরিক্ত চিন্তা মানব জীবনে বিশাল মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। এটি শুধু একান্তই আমাদের মস্তিষ্কের সমস্যাই নয় বরং, এর প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম, সম্পর্ক এবং কর্মক্ষমতার উপরও পড়ে। 

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #অতিরিক্ত চিন্তা #মানসিক স্বাস্থ্যে