লাইফস্টাইল

অতিরিক্ত কথা বলুন, মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ান!

বায়ান্ন লাইফস্টাইল ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

হয়তো আপনিও এই দলের। আবার আপনার আশেপাশের অনেকেও এই দলের হতে পারে। এখন আসি আসল কথায়। এমন অনেকেই আছেন যারা কমবেশি অনেক বেশি কথা বলেন। তবে জানেন কি আপনার এই অতিরিক্ত কথা বলার কারণে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন! 

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আমাদের প্রতিদিনের কথোপকথন শুধু সামাজিক সম্পর্কই বাড়ায় না বরং, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। অতিরিক্ত কথা বলার মাধ্যমে মস্তিষ্কে সৃষ্টিশীলতা এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী ও গবেষক ড. এলেন ওয়াটসন বলেছেন, মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত কথা বলার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে। এ থেকে আমাদের মনোযোগ এবং চিন্তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা বলেন, কথোপকথন কখনও কখনও মস্তিষ্কের জন্য একটি 'ফিটনেস' কাজ করে, যেখানে স্নায়ু সংযোগ আরো দৃঢ় হয় এবং মস্তিষ্কের পরিসর প্রশস্ত হয়। এতে স্ট্রেস কমে, সৃষ্টিশীলতা বাড়ে এবং মনের অবস্থা উন্নত হয়।

গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে ড. ওয়াটসন আরও বলেন, কথা বলা বা আলোচনায় অংশগ্রহণ করার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের 'এলিমেন্টারি ব্রেন সেন্টার' আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে, যেখান থেকে মস্তিষ্কের স্নায়ু গঠন এবং যোগাযোগে গতি আসে। এই প্রক্রিয়া মানুষের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নামক হরমোনের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে, যা স্নায়ু সিস্টেমকে স্বাস্থ্যকর এবং তরতাজা রাখে

এছাড়া নিউরো সায়েন্টিস্ট প্রফেসর মাইকেল ক্লার্ক বলেছেন, যখন আমরা কোনো বিষয়ের ওপর গভীরভাবে আলোচনা করি, তখন মস্তিষ্ক তার 'নিউরাল প্লাস্টিসিটি' বা ন্যাচারাল অ্যাডাপটিভ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে কেবল স্মৃতিশক্তি নয়, মানুষ নিজেকে আরও আত্মবিশ্বাসী এবং উৎসাহী অনুভব করে।

গবেষণা ও ফলাফল:

মস্তিষ্কে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি

বিশ্ববিদ্যালয় অব ক্যালিফোর্নিয়া এর গবেষকরা বলেছেন, কথা বলার মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলির মধ্যে নতুন সংযোগ গড়ে ওঠে, যা চিন্তা এবং স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যখন আমরা অন্যদের সঙ্গে আমাদের চিন্তা এবং অনুভূতিগুলি ভাগ করি, মস্তিষ্কের ভাষা, স্মৃতি এবং সৃজনশীলতার সঙ্গে যুক্ত অংশগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর ফলে আমাদের চিন্তাভাবনা আরও গতিশীল ও স্পষ্ট হয়।

মানসিক চাপ কমানো

মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণার তথ্যে বলা হয়েছে, কথা বলার মাধ্যমে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন এবং অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মানসিক চাপ কমায় এবং সুস্থ চিন্তাভাবনা বজায় রাখে। অতিরিক্ত কথা বললে শরীরের কর্টিসোল (স্ট্রেস হরমোন) কমে এবং অস্থিরতা ও উদ্বেগ দূর হয়। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক শান্ত থাকে এবং কাজের জন্য প্রস্তুত থাকে।

সৃজনশীলতা বৃদ্ধি

অনেক গবেষক বলেছেন, যখন আমরা নতুন কিছু সম্পর্কে কথা বলি, আমাদের মস্তিষ্কে সৃজনশীল ধারণা জন্ম নেয়। কথোপকথনে আমরা নতুন ধারণার প্রসার ঘটাতে পারি এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি দেখে তা সমাধান করতে সক্ষম হই। এই প্রক্রিয়া আমাদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করে এবং একটি আরও গতিশীল মস্তিষ্ক তৈরি হয়।

সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়ন

কথা বলার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং তা মজবুত করা সম্ভব হয়। যাদের কথা বলার অভ্যাস থাকে, তারা সাধারণত তাদের অনুভূতি এবং চিন্তা সহজে প্রকাশ করতে পারেন, যা সামাজিক সম্পর্ক এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। সম্পর্কগুলো আরও শক্তিশালী হয় এবং একে অপরের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়।

নিউরাল প্লাস্টিসিটি 

মস্তিষ্কের নিউরাল প্লাস্টিসিটি বা স্নায়ু সংযোগ তৈরি করার ক্ষমতা কথার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নতুন কিছু শিখতে, সমস্যা সমাধানে এবং নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলায় মস্তিষ্ক আরও সক্ষম হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত কথা বলা মস্তিষ্কের এই ক্ষমতাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগায়, যা স্মৃতি ও চিন্তার শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of California) গবেষক ড. স্যামুয়েল স্টিভেনস বলেছেন, কথা বলার মাধ্যমে মস্তিষ্কের মধ্যে স্নায়ু সংযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন ধারণা তৈরির জন্য আমাদের মস্তিষ্ক আরও প্রস্তুত হয়। এটি আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং নতুন চিন্তা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।

নিউরোলজিস্ট এবং মস্তিষ্ক গবেষক ড. জুলি পিটার্সন বলেছেন, কথার মাধ্যমে মস্তিষ্কে এক ধরনের নিউরাল অর্গানাইজেশন হয়, যা চিন্তা ও তথ্য শিখতে আরও কার্যকর করে তোলে।

কথা বলার অন্য উপকারিতা:

আবেগিক সুস্থতা: কথা বলার মাধ্যমে আমাদের আবেগ আরও মুক্তভাবে প্রকাশিত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।

নতুন ধারণা সৃষ্টি: মস্তিষ্কে সৃষ্টিশীল চিন্তা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন পরিকল্পনা ও ধারণা তৈরিতে সাহায্য করে।

তীব্র মনোযোগ: কথার মাধ্যমে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, যা কাজের ক্ষেত্রে আরও দক্ষতা আনতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত কথা বলা শুধু আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় না বরং, আমাদের মানসিক সুস্থতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশেও সহায়ক। তবে কথাবার্তার মধ্যে একটি ব্যাল্যান্স বজায় রাখা প্রয়োজন। যাতে এটি শুধুমাত্র মস্তিষ্কের উপকারে আসে এবং অন্যদের জন্য বিরক্তির কারণ না হয়। নিয়মিতভাবে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে আমাদের চিন্তা শক্তি বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করবে।

অতিরিক্ত কথা বলার সীমাবদ্ধতা : 

তবে এই গবেষণায় কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,কথা বলার মাধ্যমে মস্তিষ্কের উপকার হলেও অযথা বা অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে মনোযোগের অভাব সৃষ্টি হতে পারে। যা হতাশা বা বিষণ্ণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #অতিরিক্ত বেশি কথা বলা #মস্তিষ্ক