জাতীয়

৬ মাসে ২৭ খুন

‘সাম্প্রদায়িক নয়, বেশিরভাগ খুনের পেছনে ব্যক্তিগত বিরোধ’: পুলিশ সদর দপ্তর

গেল ৬ মাসে ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনা সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এছাড়া গত ১১ মাসে ২৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চা সম্প্রতি দাবি করেছিল, গত ১১ মাসে দেশে ২,৪৪২টি সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে এবং এতে প্রাণ গেছে ২৭ জনের। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) পুলিশের পক্ষ থেকে  পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২২টি ঘটনায় হত্যা মামলা এবং পাঁচটি ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্তে দেখা গেছে, ঘটনা সবই ব্যক্তিগত বিরোধ, আর্থিক লেনদেন, জমি সংক্রান্ত ঝামেলা, চুরি বা ডাকাতির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কেন্দ্র করে ঘটেছে।

হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনের কারণ ছিল- জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে দুইটি হত্যা, মাদকসহ আর্থিক লেনদেনে জড়িত হয়ে দুইটি খুন, ডাকাতি বা চুরির সময় নিহত হয়েছেন ৭ জন, সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গুলির ঘটনায় নিহত ১ জন, বাজারে তরমুজ বিক্রিকে কেন্দ্র করে প্রাণ গেছে একজনের, আত্মহত্যা করেছেন তিনজন।

এবং ১১টি মৃত্যুর তদন্ত এখনো চলছে, যেগুলোর মধ্যে মানসিকভাবে অসুস্থ নারীর মৃত্যু বা দুর্গম এলাকায় মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা রয়েছে।

এছাড়া পুলিশ জানায়, এসব মামলায় ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ১৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং ১৮ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ঐক্য পরিষদের দাবি অনুযায়ী যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ২০টি ঘটনার মধ্যে পুলিশ ১৬টি মামলার তথ্য পেয়েছে এবং এসব ঘটনায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তিনটি ঘটনায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি। রাজশাহীতে আদিবাসী নারী ধর্ষণের যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তদন্তে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি; বরং বাদী ও অভিযুক্তের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানানো হয়।

একইভাবে মাগুরার এক ঘটনায় গণধর্ষণের অভিযোগও প্রাথমিক তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়নি এবং এ ঘটনায় কোনো অভিযোগও দায়ের হয়নি।

সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চা বলেছে, ২০২৪ সালের ৪ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে, যার সংখ্যা ছিল ২,০১০টি। পুলিশ ৫৬টি জেলায় এসবের মধ্যে ১,৪৫৭টি ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। এর মধ্যে ৬২টি ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং ৯৫১টি ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। মামলাগুলোর ভিত্তিতে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশের মতে, ঐ সময়ের মধ্যে সংঘটিত সহিংসতার ৮২.৮ শতাংশই ঘটেছে ৫ আগস্ট। তদন্তে দেখা গেছে, এসব ঘটনার অধিকাংশই রাজনৈতিক বিরোধজনিত ছিল এবং অনেক অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও উপাসনালয়ে মোট ১২৭টি সহিংসতার সংবাদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৬টি ঘটনায় মামলা ও ৬১টি ঘটনায় জিডি করা হয়েছে। মামলাগুলোর ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৪ জনকে।

অন্যদিকে, মন্দিরে চুরি, প্রতিমা ভাঙচুর, আগুন লাগানো, জমি দখলসহ ৬০টি ঘটনার অভিযোগ এসেছে। পুলিশ জানায়, এর মধ্যে ২০টি চুরির ঘটনায় ১৪টি মামলা এবং পাঁচটি জিডি হয়েছে। প্রতিমা বা মন্দির ভাঙচুরের ২৪টি ঘটনার মধ্যে ১৮টি মামলা হয়েছে, ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং ১০ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তবে দুটি ভাঙচুর এবং একটি চুরির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

চারটি অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তদন্তে দেখা গেছে, এগুলোর পেছনে কোনো নাশকতা ছিল না। বরং সবগুলোতেই জমি ও সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল, যার মধ্যে দুটি ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়েছে।

এ ছাড়া জায়গা দখলের ছয়টি ঘটনায় কোনো প্রকৃত দখলের প্রমাণ মেলেনি বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

খিলক্ষেতে রেলওয়ের জায়গায় স্থাপিত একটি পূজামণ্ডপ উচ্ছেদ নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটি আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে পরিচালিত হয়েছিল বলে পুলিশ জানায়। আর বগুড়ার এক শ্মশানঘাটে পিলার ভাঙার ঘটনায় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নতুনভাবে নির্মাণ করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সংখ্যালঘু ঐক্য পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, অন্যান্য ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পর্যায়ক্রমে সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং সকল স্থাপনা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

 

 

এমএ//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #বাংলাদেশ পুলিশ #৬ মাসে ২৭ খুন #সাম্প্রদায়িক সংঘাত #পুলিশ সদর দপ্তর