অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বিভুরঞ্জন সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে ফিরতে হলো তাকে। বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ বাসায় পৌঁছালে স্ত্রী শেফালী সরকারসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোক আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো বাড়ির পরিবেশ।
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীর ‘অপ্সরা’ নামের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসা হয় তার নিথর দেহ। এর আগেই বাড়িটিতে জড়ো হয়েছিলেন বিভুরঞ্জনের দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও স্বজনরা।
খেলাঘরের প্রেসিডিয়াম অধ্যক্ষ শরীফ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা তো উনার লেখার ভক্ত। তার মতো খ্যাতিমান সাংবাদিকের এমন বিদায়, মেনে নেওয়া কষ্টের।”
বগুড়া থেকে এসেছেন বিভুরঞ্জনের বোন ভারতী সরকার। তিনি বলেন, “আমার ভাই কীভাবে মরলো, এখনো কিছুই জানি না।”
বিভুরঞ্জন সরকারের ভাই চিররঞ্জন সরকার বলেন, “মরদেহ বাসাবোর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে নেওয়া হবে। সেখানেই তার সৎকার হবে।”
পরে মৃতদেহ নিয়ে ফ্রিজিং গাড়ি বাসাবোর দিকে রওনা করে।
বিভুরঞ্জনের পারিবারিক বন্ধু, ব্যাংকার আসাদুজ্জামান মুকুল বলেন, “বিভুরঞ্জন সরকারের লেখা পড়েই তো আমাদের বেড়ে ওঠা। যায়যায়দিন পত্রিকায় তিনি যখন ‘তারিখ ইব্রাহিম’ নামে লিখতেন, সেই লেখা পড়ে মুগ্ধ হতাম। তার মতো মেধাবী সাংবাদিক যেভাবে মারা গেলেন এবং খোলা চিঠিতে যা লিখে গেলেন; তাতে আমাদের সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে ভাবা উচিত। সাংবাদিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা পেশার এমন দুরবস্থা কেন, তা সবার ভাবা উচিত।”

উল্লেখ্য, ৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন চাকরি করতেন ‘আজকের পত্রিকা’য়। অফিসে যাওয়ার কথা বলে বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার পর তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন বিকালে মুন্সীগঞ্জে মেঘনা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ আনা হয় ঢাকার বাসায়।
বিভুরঞ্জন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখতেন। তিনি সর্বশেষ নিবন্ধটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেইল করেন বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায়। ফুটনোটে তিনি লেখেন, “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।”
‘খোলা চিঠি’ শিরোনামে বিভুরঞ্জনের শেষ লেখাটি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মতামত বিভাগে প্রকাশিত হয়। সেখানে নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েটে থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন তিনি।
পরিবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বিভুরঞ্জন তার মোবাইল ফোনটিও বাসায় রেখে গিয়েছিলেন।
তিনি না ফেরায় এবং কারো কাছে তার কোনো তথ্য না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার ছেলে ঋত সরকার।
সেখানে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা করেন তার বাবা। কিন্তু এরপর আর বাসায় ফেরেননি।