যুদ্ধবিরতির নাজুক শান্তি ভেঙে আবারও রক্ত ঝরল গাজায়। সাবরা এলাকায় সংঘর্ষের খবর কভার করার সময় গুলিতে নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সালেহ আলজাফারাওয়ি। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার মাত্র কয়েক দিন পর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো আল–জাজিরা আরবিকে জানায়, ২৮ বছর বয়সী সালেহ গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাতের ভিডিও ধারণ ও প্রচারের মাধ্যমে পরিচিতি পান। ঘটনার দিন তিনি সাবরা এলাকায় হামাস ও একটি গোত্রের সশস্ত্র সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করছিলেন। সেই সময় গুলিতে আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের প্রকাশ করা ভিডিও ফুটেজ আল–জাজিরার পক্ষ থেকে যাচাই করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরিহিত সালেহর নিথর দেহ একটি ট্রাকের পেছনের অংশে পড়ে আছে। স্থানীয় সময় রোববার সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পরে সন্ধ্যায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো জানায়, গতকাল সাবরা এলাকায় হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী ও দুগমুশ গোত্রের সশস্ত্র সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল–জাজিরা আরবিকে বলেন, ‘গাজা নগরীর এ সংঘর্ষে (ইসরায়েলি) দখলদারত্বের সঙ্গে যুক্ত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী জড়িত।’
দুগমুশ গাজার সবচেয়ে প্রভাবশালী গোত্রগুলোর একটি। হামাসের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক। এর আগেও তাদের সশস্ত্র সদস্যরা একাধিকবার হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে। এসব সশস্ত্র সদস্য যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে গাজা নগরীতে ফিরে আসা বাস্তুচ্যুতদের হত্যার সঙ্গে জড়িত।
এবারের যুদ্ধবিরতির পরও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বারবার সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন বেশ নাজুক। চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
গত জানুয়ারিতে আল–জাজিরার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সালেহ। তখন গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে হবে করছে। তার আগে সালেহ আল–জাজিরার সঙ্গে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে নিজের বাস্তুচ্যুতির অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।
সালেহ বলেছিলেন, ‘এই ৪৬৭ দিনে (যুদ্ধের) আমি যেসব দৃশ্য দেখেছি ও যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি, সেসব আমার স্মৃতি থেকে মুছে যাবে না। আমরা যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, কখনোই সেগুলো ভুলতে পারব না।’
নিজের কাজের জন্য ইসরায়েলের কাছ থেকে একাধিকবার হুমকি পাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন সালেহ। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি প্রতিটি সেকেন্ড ভয়ের মধ্যে বসবাস করি। বিশেষ করে ইসরায়েলি দখলদারত্ব আমার সম্পর্কে কী বলছে, সেসব শোনার পর। আমি জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড কাটাচ্ছিলাম, কিন্তু জানতাম না যে পরের সেকেন্ডটি আমার জন্য কী বয়ে আনছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় হামলায় গাজা উপত্যকাজুড়ে ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকর্মীর প্রাণ গেছে।
এসি//