উত্তর জনপদের সীমান্ত ঘেষা জেলা কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে পৌষের তীব্র শীত। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও জীবন-জীবিকার তাগিদে ফসলের মাঠে নেমেছেন কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা। এই শ্রমিকরা হাড় কাঁপানো ঠান্ডাকে উপেক্ষা শুধুমাত্র দুমুঠো আহারের জন্য কাকডাকা ভোর থেকে মাঠে মাঠে ফসলের পরিচর্যা করছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, তীব্র শীত ও কুয়াশায় রবি শস্যের জন্য ঠান্ডা আবহাওয়া উপযোগী ও কিছু কিছু ফসলের জন্য আশীর্বাদ হলেও অতিরিক্ত কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু ও সরিষা এবং বোরো বীজতলার মতো ফসলে 'লেট ব্লাইট' বা পচন রোগের আশঙ্কা বাড়ছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও শ্রমিকরা দলবেঁধে ভুট্টা, আলু ও শাক-সবজি জমিগুলোতে নিড়ানি দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আমন ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। এই কৃষি শ্রমিকরা গায়ে চাদর জড়িয়েই তারা কাজ করছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার পানিমাছকুটি এলাকার নারী কৃষি শ্রমিক জুহুরা জান্নাতি ও সখিনা বেগম জানান, "কাজ না করলে আমাদের চুলা জ্বলবে না, তাই শীত দেখে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। আমরা এ ভাবে প্রতিদিন মানুষের দিন মজুরী কাজ-কাম করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করি’।
এই দুই নারী শ্রমিক আরও জানান, কি শীত, কি বর্ষা সব মৌসুমে পুরুষদের সাথে সমান কাজ করেও তাদের মজুরি কম। হাড়কাঁপানো শীতে এই নারী শ্রমিকরা এখনো কম্বল পায়নি বলেও জানান তারা।
একই উপজেলার পানিমাছকুটি এলাকার কৃষি শ্রমিক আব্দুল মজিদ ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গজেরকুটি এলাকার কৃষি শ্রমিক বিদেশি চন্দ্র রায় এবং পূর্ব ফুলমতি এলাকার কৃষি শ্রমিক জয়নাল জানান, এই ঠান্ডায় হাত পা কাঁপছে ঠিক। তবে কাজ না করলে সংসার চলবে কি করে। চার দিন থেকে আমাদের এলাকায় সূর্যের দেখা নেই। গরীব দিন মজুরী আমরা যতই ঠান্ডা হোক ঘরে বসে থাকলে আমাদের পেট চলবে না। তাই আমাদের যতই ঠান্ডা থাকুক কাজ করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
একই উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের ভুট্টা চাষি হাসান আলী জানান, ‘ ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা রোপন করা হয়েছে। এই তীব্র শীতে ফসল রক্ষার্থে আপাতত ভুট্টা খেতে নিড়ানি দিচ্ছি। ইতোমধ্যে ৩ বিঘা জমিতে হেমের ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছে। ঠান্ডার প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে হালকা সেচ দেওয়া হবে’।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার সকাল ৬টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আরও জানান, আগামী কয়েকদিন শীত ও কুয়াশার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে এবং সামনে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা: নিলুফা ইয়াছমিন জানান, ভুট্টা ২ হাজার ২০০, গম ১৫০, সরিষা ৩ হাজার ৫০৫, আলু ৫৫০ ও বোরো বীজতলা ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়েছে। কৃষি পক্ষ থেকে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় এ সব ফসলের বিশেষ যত্ন নিতে এবং কোনো রোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ভাবে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আই/এ