চট্টগ্রামে চলছে টেস্ট ম্যাচ। কিন্তু শেষ সেশনে ১০ ওভার আগের স্কোরবার্ড দেখে কে বলবে, এটা টেস্ট ম্যাচ! হ্যাঁ, পোশাকটা সাদা, বলটাও লাল কিন্তু স্কোরবোর্ড বলছে টেস্ট ম্যাচটা টি–টোয়েন্টি থেকে টি ১০–এ নামিয়ে এনেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চতুর্থ ইনিংসে অভিষিক্ত কাইল মায়ার্সের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক টেস্টে জয় পেয়েছে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের দেয়া টার্গেট রেকর্ড গড়েই জিততে হতো ক্যারিবীয়দের। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখাতে গিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে অভিষিক্ত কাইল মায়ার্স। অথচ জেসন হোল্ডার, পোলার্ড, হেটমায়াররা আসলে তার আসাটাই ছিল অনিশ্চিত। সুযোগ পেয়েই তাকে কাজে লাগিয়েছেন মায়ার্স।
ক্যারিবীয়রা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতেছে ৩ উইকেটে। অভিষিক্ত কাইল মায়ার্স শেষ পর্যন্ত ৩১০ বলে ২০ চার ও ৭ ছয়ে ২১০ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। মায়ার্স বিশ্বের ৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান যে কিনা অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।
চট্টগ্রাম টেস্টে পঞ্চম দিনের দুই সেশন বাংলাদেশের বোলারদের উপর রাজত্ব করেছেন কাইল মায়ার্স ও এনক্রুমাহ বোনার। তৃতীয় সেশনের শুরুতে এসে ধরা দেয় উইকেট। তৃতীয় সেশনের প্রথম ওভারের শেষ বলে তাইজুল ইসলামের বলে এলবির শিকার হয়ে ফিরেন অর্ধশত রান করা এনক্রুমাহ বোনার। এতে করে ২১৫ রানে কার্যকরী জুটি ভাঙে। বোনারের উইকেটটি ছিল তাইজুলের টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩০০তম উইকেট। অবশ্য বিদায়ের আগে বোনার ২৪৫ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৮৬ রানের ঝকঝকে একটি ইনিংস উপহার দেন।
দলীয় ২৯২ রানের সময় ব্ল্যাকউডকে নাইম হাসান সরাসরি বোল্ড করেন। এরপর দলীয় ৩৯২ রানে জসুয়া ডি সিলভাকে ব্যক্তিগত ২০ রানে সরাসরি বোল্ড করে দ্বিতীয় ইনিংসের নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। এরপর জয় থেকে এক রান দূরে থাকতে মিরাজের বলে কোন রান না করেই সাইফ হাসানের কাছে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কেমার রোচ।
বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেট পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি ২৬ ওভার বল করে ৫৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট লাভ করেছেন।
এর আগে গত বুধবার টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। সাদমান ইসলাম (৫৯) রান, সাকিব আল হাসান (৬৮) রান ও মেহেদী হাসান মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরি (১০৩) রানে ভর করে টাইগাররা প্রথম ইনিংসে ৪৩০ রান সংগ্রহ করে।
ক্যারিবীয়দের হয়ে জোমেল ওয়ারিক্যান ৪টি, রাকিম কর্ণওয়াল ২টি, কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও এনক্রুমাহ বোনার ১টি করে উইকেট লাভ করে।
ক্যারিবীয়রা তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগার স্পিনারদের তোপে পড়ে ২৫৯ রানে অল আউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ লিড পায় ১৭১ রানের। ক্যারিবীয়দের হয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন। এছাড়াও কাইল মায়ার্স ৪০ রান, জারমেইন ব্ল্যাকউড ৬৮ রান ও জসুয়া ডি সিলভা ৪২ রান করেন।
বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ৪টি, মুস্তাফিজুর রহমান, তাইজুল ইসলাম ও নাইম হাসান ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে। তারপরও শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক মুমিনুল হকের ক্যারিয়ারের ১০ম সেঞ্চুরি ও লিটন দাসের অর্ধশত রানে ভর করে ৮ উইকেটে ২২৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করেন। অধিনায়ক মুমিনুল ১৮২ বলে ১০ চারের সাহায্যে ১১৫ রান করেন এবং লিটন দাস ১১২ বলে ৫ চারের সাহায্যে ৬৯ রান করেন।
ক্যারিবীয়দের হয়ে রাকিম কর্ণওয়াল ও জোমেল ওয়ারিক্যান ৩টি, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২টি উইকেট লাভ করেন।
চট্টগ্রামে ২০০৮ সালে চতুর্থ ইনিংসে ৩ শতাধিক রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল নিউজিল্যান্ড। সেবার তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১৭ রান। যা মাত্র ৩ উইকেটে পাড়ি দেয় কিউইরা।
এএ