আদালতের নির্দেশে প্রথম কোনো হত্যাকাণ্ডের প্রাণী আসামি হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা চিড়িয়াখানায় বন্দি করা হয়েছিল কুকুরটিকে। দেহের রঙ কালো ও মেহগনি। ওজন ৫০ কেজি। দৈনিক খাবার দিতে হয় তিন থেকে চার কেজি গরু, খাসি কিংবা মুরগির মাংস। জার্মানিতে তার জন্মভূমি। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শত্রুকে ধরে এনে লেলিয়ে দেয়া হতো এ প্রজাতির কুকুর। সে এতটাই হিংস্র যে একজন মানুষকে হত্যা করে সাবাড় করতে তার সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। বিশ্বের দ্বিতীয় হিংস্র প্রজাতির এ কুকুরের নাম ‘রটওয়েলার’।
এই হিংস্র কুকুর লেলিয়েই হত্যা করা হয় চট্টগ্রামের সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রি মজুমদার হিমুকে। ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপুর বাড়িতে আটকে রেখে হিমাদ্রির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ব্যাপক মারধর করার পর তার উপর এ বিদেশী হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দেয় আসামিরা। কুকুরের কামড়ে জর্জরিত হওয়ার পর চারতলার ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয় হিমাদ্রিকে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর বন্ধুদের কাছে তার উপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেয় হিমাদ্রি। ওই বর্ণনা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে তার বন্ধুরা। এরপর থেকে আর কথা বলতে পারেনি হিমাদ্রি। টানা ২৬ দিন হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণা শেষে ২৩ মে মারা যায় হিমাদ্রি।
২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের হিমাদ্রি মজুমদার হিমু হত্যা মামলার রায় দেয়া হয়। আদালতের কাছে রটওয়েলার কুকুর লেলিয়ে দিয়ে হিমুকে হত্যা করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ মামলায় পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালত মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত ও অভিযুক্ত হিসেবে আসামি এই রটওয়েলার কুকুরকে চিড়িয়াখানায় বন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এর পর থেকে দেশের প্রথম প্রাণী আসামি হিসেবে এটিকে চিড়িয়াখানায় দশ বর্গফুটের একটি লোহার খাঁচায় বন্দি রাখা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন শুভ জানান, আদালতের রায়ের পর দীর্ঘদিন চিড়িয়াখানায় আটক থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের প্রথমদিকে আসামি এ কুকুরটি মারা যায়।
রটওয়েলার কুকুরটি রট ও রটি নামে পরিচিত। এটির দেহের বর্ণ কালো ও মেহগনি হয়ে থাকে। একটি পুরুষ রটওয়েলারের উচ্চতা ৬২ থেকে ৬৯ সেন্টিমিটার। আর স্ত্রী রটওয়েলার হয়ে থাকে ৫৬ থেকে ৬৩ সেন্টিমিটার। এটি মাংসাশী প্রজাতির প্রাণী। চিড়িয়াখানায় বন্দি অবস্থায় এটিকে গরু, ছাগল ও মুরগির মাংস খেতে দেয়া হতো। দৈনিক তিন থেকে চার কেজি মাংস খেতে দেয়া হতো তাকে। সঙ্গে দেয়া হয় তিন লিটার পানি। শক্তিশালী ও দৃঢ় স্বভাবের কুকুরটি বিশ্বের দ্বিতীয় হিংস্র প্রজাতির কুকুর।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রবেশপথের ডানপাশে একটি লোহার খাঁচায় বন্দি ছিল কুকুরটি। বাঘ কিংবা সিংহের মতোই এ প্রাণীটির খাঁচা ঘিরেও দর্শনার্থীর ভিড় থাকত। চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের জানার সুবিধার্থে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ খাঁচার বাইরে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন কুকুরটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনবাংলাদেশের | প্রথম | প্রাণী | আসামি