আর্কাইভ থেকে ফুটবল

বিশ্বকাপ আসরে মুফতাহর চমক!

বিশ্বকাপ আসরে মুফতাহর চমক!
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে চমকের কমতি রাখেনি কাতার। তবে নাম করা সব তারকাদের পেছনে ফেলে সব আলো কেড়ে নিলো এক তরুণ। বিশ্বখ্যাত হলিউড তারকা মরগ্যান ফ্রিম্যানের সঙ্গে উদ্বোধনী মঞ্চে দুহাতে ভর করে প্রবেশ করেন গনিম মোহাম্মদ আল মুফতাহ। বিশ্বকাপ উদ্বোধনীতে পবিত্র কুরআনের সুরা হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াত খুব সুন্দরভাবে তেলোয়াত করে সবাইকে মুগ্ধ করেন তিনি। পরনে ছিলো কাতারের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। কোমর থেকে শরীরের নিচের অংশ নেই তার! সেই গনিম আল মুফতাহ আলো ছড়ালেন বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে! বিশ্বকাপের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশে কেন থাকলেন মুফতাহ? মুফতাহ মধ্যপ্রাচ্যের এক জনপ্রিয় মুখ। তার উঠে আসার গল্প অনেকের জন্যই প্রেরণার। জটিল "কোডাল রিগ্রেশন সিনড্রোম" রোগে আক্রান্ত তিনি। এই বিরল রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের নিম্নাংশের মেরুদণ্ডের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলো তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে সব প্রতিকূলতা জয় করেছেন এ ২০ বছর বয়সি এই তরুণ। কিন্তু হাল ছাড়েননি মুফতাহ ও তার পরিবার। পেয়েছেন ফলও। সব প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে মুফতা কাতারের জনপ্রিয় ইউটিউবার, জনপ্রিয় মটিভেশনাল স্পিকার এবং মানবসেবী। ২০১৮ সালে টেড এক্স কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে একটি বক্তৃতার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন মুফতাহ। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান। ইনস্টাগ্রামে এক মিলিয়নেরও বেশি অনুসারী আছে মুফতার। পা নেই তবুও থেমে থাকেনি তার পথচলা। মুফতাহ একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থা গঠন করেছেন। তার মতো যারা পায়ে চলতে পারেন না, তাদেরকে সংস্থাটি থেকে হুইল চেয়ার দেয়া হয়। মানবদরদী কাজের জন্য তাকে ২০১৪ সালে কুয়েতের আমীর শেখ সাবা আল আহমেদ আল সাবা তাকে শান্তির দূত নামে অবিহিত করেন। পড়াশোনাতেও এগিয়ে আসছে এই মুফতাহ। ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এবার বিশ্বকাপে ফিফার শুভেচ্ছা দূত মনোনীত করা হয় তাকে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনীর শুরু অংশেও থাকলেন তিনি। মরগ্যান ফ্রিম্যানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বললেন, ‘আশা-শান্তির ও মানুষের মধ্যে ঐক্যের কথা।’ মুফতাহ কাতারের সর্বকনিষ্ঠ উদ্যেক্তাও। তিনি ঘারিসা আইসক্রিম প্রতিষ্ঠা করেছেন। কাতারে এর ৬টি শাখা রয়েছে। সমগ্র উপসাগরীয় অঞ্চলে এই ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। তার প্রিয় খেলা সাতার, প্যারা সাইকেলিং, স্কুবা ড্রাইভিং, ফুটবল, হাইকিং এবং স্কেটবোর্ডিং। স্কুলে হাতে জুতা করে ফুটবল খেলতেন তিনি। স্বাভাবিক বন্ধুদের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলেছেন মুফতাহ। স্বপ্ন দেখেন একদিন প্যারা অলিম্পিকে খেলার। সবাইকে চমকে দিয়ে আরবের সবচেয়ে বড় পাহাড় জাবেল শামসের চূড়ায় উঠেছেন তিনি। ভবিষ্যতে কাতারে প্রধানমন্ত্রী হতে চান গনিম মোহাম্মদ আল মুফতাহ। এই তরুন প্রমাণ করেছেন ছুটে চলার জন্য পা জরুরি নয়। জরুরি অদম্য মনোবল। সেই মনোবল আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকলে পাহাড়-পর্বতও জয় করা যায়।  

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন বিশ্বকাপ | আসরে | মুফতাহর | চমক