রাজধানী ঢাকায় যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিলের মধ্য দিয়ে ঐক্যের যাত্রাকে দৃঢ় করতে চায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোট। আজ বিএনপি নয়াপল্টনে, ১২-দলীয় জোট বিজয়নগরে, গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং এলডিপি পূর্ব পান্থপথ থেকে মিছিল বের করবে।
পৃথক মিছিল বের করবে জামায়াতে ইসলামীও। রাজধানী জুড়ে বাদ জুমা গণমিছিলে ডাক দিয়েছে বিএনপি। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর গণমিছিলের ডাকে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সকাল থেকেই রাজধানী দখলের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন এলাকার দায়িত্বও বণ্টন করে দেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার গঠন করাসহ ১০ দফা দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর এই গণমিছিল কর্মসূচি দেয় বিএনপি। কিন্তু একই তারিখে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল পড়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির এই গণমিছিলের তারিখ পরির্বতনে আহ্বান জানান। ওবায়দুল কাদেরের আহ্বানে কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে বিএনপি।
এ নিয়ে গেলো শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। নজরুল ইসলাম খান বলেন, যেহেতু বিএনপি সংঘাত চায় না, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট নিরসন করতে চায় এবং সমস্যার সমাধান চায়, আর যেহেতু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৪ তারিখে তাদের কাউন্সিলের কারণে আমাদের কর্মসূচি পরিবর্তন প্রত্যাশা করেছেন এবং আমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেজন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক আচরণ করতে চাই। তাই ২৪ ডিসেম্বরের কর্মসূচি আমরা পুনর্বিন্যাস করেছি।
সূত্র মতে, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল ও জোটের আজকের গণমিছিলের বিপরীতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষমতাসীনরা অবস্থান করবেন। সেগুলো হলো- যাত্রাবাড়ী মোড়, ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, শ্যামলী ও মিরপুর-১০। এছাড়া রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নিদের্শ দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ডা. মহিউদ্দিন জালাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীর নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ীসহ তার আশপাশের ৫ থেকে ৬ থানার নেতাকর্মীরা একত্রিত হবেন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন বাহার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম অবস্থান নেবেন। আওয়ামী লীগের এই পাঁচ নেতার নেতৃত্ব ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরা অবস্থান করবেন।
এদিকে রাজধানীর শ্যামলী স্কয়ারে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত হবেন। সেই গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুরর রহমান। অন্যদিকে মিরপুর ১০ -এও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে।
শ্যামলীর গণসমাবেশের ভাষণ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সেই সমাবেশেও যাওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপির গণমিছিল নিয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের মহানগর দক্ষিণ এক বর্ধিতহ সভা করেছে। এছাড়া যুবলীগ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি মিছিলও করেছে। সেখান থেকে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মহানগর ও যুবলীগের দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপি বাদ জুমা গণমিছিল করলেও আওয়ামী লীগ সকাল ১০টা থেকেই মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম বলেন, খেলাফত আন্দোলনকারী, জামায়াত, আমাদের হুজুরেরা বাদ জুমা কর্মসূচি দেয়। জুমার নামাজ শেষ করে তারা তুলকালাম করার চেষ্টা করে, এটাই আমরা দেখে এসেছি। ইসলামি দলগুলো ছাড়া কেউ বাদ জুমা কর্মসূচি দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। বিএনপি বাদ জুমা যে কর্মসূচি দিয়েছে, এটাই তাদের খারাপ উদ্দেশ্য। তারা বিভিন্ন মসজিদ থেকে বের হবে, বিভিন্ন জায়গায় তারা গোলমাল সৃষ্টি করবে। আমরা পায়ে পারা দিয়ে কারও সাথে ঝগড়া করতে চাই না। তাদের কর্মসূচি তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে পালন করুক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কর্মসূচির নামে যদি সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়, অশান্তিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় তাহলে আমাদের নেতা-কর্মীরা বসে থাকবে না। তার দাঁত ভাঙার জবাব দেবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থান করব।