আদালতের রায় অমান্য করে জাপানি মা নাকানো এরিকো দ্বিতীয়বারের মতো তার বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে এবার তিনি কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তা প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগেও জাপানি মা তার দুই মেয়েকে নিয়ে নিজ দেশে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আদালতের রায়ের কারণে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, ওই জাপানি মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য গতকাল বিমানবন্দরে আসেন। এ বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
জাপানি মেয়েদের বাবা ইমরান শরিফের আইনি সহায়তা নেয়া প্রতিষ্ঠান নাসিমা আক্তার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের কর্মকর্তা মির্জা মো. নাহিদ হাসান গণমাধ্যমে বলেন, আমরা সূত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ওই জাপানি মা তার বড় মেয়েকে নিয়ে ৩১ জানুয়ারি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন। এই নিয়ে দুবার পালানোর চেষ্টা করেন তিনি।
গেলো ২৩ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে দুই মেয়েকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন জাপানি মা। তবে মেজ মেয়ে লাইলা বাবাকে হারাবে- এমন ভয় পেয়ে বাবার আশ্রয় নেন। তাই এবার মেজ মেয়ে মায়ের সঙ্গে ছিলেন না।
গেলো ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের দুই শিশুকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মার রাখার আদেশ দেন আদালত। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক উল্লেখ করেন, শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক তথা বাচ্চাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কার কাছে নিশ্চিত হবে রায়ে সেটির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুই সন্তান বাবার কাছে থাকা মঙ্গল হবে বলে বাদী যে দাবি করেছেন, সেটি প্রমাণ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, নাবালিকা দুই শিশুর সর্বশেষ বসবাসের স্থান জাপান। তাদের মা জাপানের চিকিৎসক। তাই মায়ের হেফাজতেই শিশুরা শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তায় থাকবে বলে মনে করেন আদালত।
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বড় মেয়ে নাকানো জেসমিন মালিকা।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসেন ওই জাপানি নারী।
গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে।