আর্কাইভ থেকে জাতীয়

গণজাগরণ মঞ্চের দশকপূর্তি আজ

গণজাগরণ মঞ্চের দশকপূর্তি আজ
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে শাহবাগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এক অভূতপূর্ব আন্দোলনের সূচনা করেছিল তরুণ প্রজন্ম। তাদের উদ্যোগে যাত্রা শুরু করেছিল ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। দেশ-বিদেশে আলোড়ন তৈরি করা এ আন্দোলনের দশ বছর পূর্তি আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি)। আলোচনা-সমালোচনা আর প্রশংসা-বিতর্কের মধ্যেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে সংগঠনটি, তাদের তেমন কোনও তৎপরতা বর্তমানে চোখে পড়ে না। ওই সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেন কিছু মুক্তমনা মানুষ। পরবর্তীতে এর সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত হলে তাদের নিয়ে গঠিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন, কাদের মোল্লার ফাঁসি হলেও বন্ধ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধসহ আরও বেশ কিছু দাবি নিয়ে আন্দোলন এগুতে থাকে।
গণজাগরণ মঞ্চ
গণজাগরণ মঞ্চ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পথচলার এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেতৃত্ব, কর্মসূচি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভক্তি দানাবাধে গণজাগরণ মঞ্চে। মনোমালিন্য দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে বিভাজন স্পষ্ট হতে থাকে। এক পর্যায়ে তা মুখোমুখি অবস্থান এবং পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রূপ নেয়। শেষমেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে সংগঠনটি। ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল রাতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার জন্য দায়ী করা হয় ছাত্রলীগকে। পরদিন শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চকে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে না দিয়ে লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে এবং ৭ জনকে আটক করা হয়। স্পষ্ট হয় বিভাজন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ঐক্য ফোরাম ও বাংলাদেশ ছাত্র সমিতির নেতারা এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে গণজাগরণ মঞ্চ ছাড়ার ঘোষণা দেয়। এভাবে গণজাগরণ মঞ্চে যে বিভাজন দেখা দেয়, তা তিন বছরের মধ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উভয় ভাগই নিজেদের মূল গণজাগরণ মঞ্চ বলে দাবি করে আসছে। একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মঞ্চের শুরুর দিকের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। অন্যটি তাকে ‘অব্যাহতি’ দিয়ে সেই সময় সংবাদ সম্মেলন করা কামাল পাশা চৌধুরীর নেতৃত্বে রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোনও অংশের খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি।
গণজাগরণ মঞ্চ
গণজাগরণ মঞ্চ
এই আন্দোলন শুরু হলে সক্রিয় হয়ে ওঠে হেফাজতে ইসলাম। তারা পাল্টা বেশ কিছু দাবি নিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হন। ২০১৩ সালের ৫ মে আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয়। তখন বন্ধ হয়ে যায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনও। এমন পাল্টা-পাল্টি আন্দোলনের মধ্যেই রাজীব হায়দারসহ কয়েকজন ব্লগার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এতসব ঘটনার মধ্যেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত বেশ কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন গণজাগরণ | মঞ্চের | দশকপূর্তি | আজ