আর্কাইভ থেকে শিক্ষা

রেলের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করা, সেই রনি বিক্রি করছেন চা

রেলের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করা, সেই রনি বিক্রি করছেন চা
দেশে রেলওয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলন করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন ঢাবির শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তবে এবার আর কোনো প্রতিবাদ বা আন্দোলন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী শুরু করেছেন নতুন এক পথচলা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিনি ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছেন। এটি আত্মশুদ্ধির আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়। বললেন মহিউদ্দিন রনি। গেলো বৃহস্পাতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ডাস চত্বরে ‘এখানে চা মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে চা বিক্রি করতে দেখা যায় মহিউদ্দিন রনিকে। পরদিন রনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সকলের কাছে নতুন ওই কর্মসূচি সম্পর্কে জানান। স্ট্যাটাসে যা বলা হয়েছে (হুবহু তুলে ধরা হলো) গেলো (৫ ফেব্রুয়ারি) মহিউদ্দিন রনি গণমাধ্যমে শুনিয়েছেন ‘প্রতিবাদী’ থেকে চা বিক্রেতা হয়ে ওঠার গল্প। রনি বলেন, শুরুটা করেছিলাম মূলত প্রয়োজন থেকে। আপনারা জানেন, আন্দোলনের পর আমি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এসময় অনেকে এগিয়ে আসতে চান এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে চান। কিন্তু দেখা গেছে, সেগুলো আমার নৈতিকতার সঙ্গে যাচ্ছে না। এগুলো থেকে বাঁচার জন্য আমার কিছু না কিছু করতে হতো। তাই নিজে একটা ব্যবসা শুরু করলাম। চা বিক্রি আত্মশুদ্ধির আন্দোলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কোনো সাময়িক ক্যাম্পেইন বা নিছক মজার উদ্দেশ্যে নয়। আত্মশুদ্ধির আন্দোলন, ক্ষুধামন্দা দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সৎ উপায়ে উপার্জনের লক্ষ্যে ব্যবসাটা শুরু করেছি। অন্য কারও বিরুদ্ধে আন্দোলন করার আগে, আঙুল তোলার আগে নিজেকে ভালো হতে হবে। রনি আরও বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিখিয়েছে জনগণের টাকা মেরে খাওয়ার চাইতে রিকশা চালানো সম্মানের, জুতা সেলাই করা সম্মানের, চা বিক্রি করা সম্মানের। আর আমি সেটাই করছি। আমি এখানে দোষের কিছু দেখছি না। যারা আমার কাছে লোভনীয় ও নেতিবাচক প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল তারা যেন আর না আসে, সেজন্য আমি এই কাজ শুরু করেছি। চায়ের ব্যবসা উপভোগ করছেন জানিয়ে রনি বলেন, আমার মনে হয়, চায়ের ব্যবসাটা বেশ ভালো, বেশ সুন্দর। আমি খুব উপভোগ করছি। গত এক মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করছি। একদিন আগে আমার ১ হাজার কাপ চা বিক্রি হয়েছে, তারপর আমি ফেসবুকের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়েছি। সবাই বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। তবে সমালোচনাও হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা আমার এই কাজকে নেগেটিভলি নিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা আরও বেশি নেগেটিভলি নেন। নেগেটিভলি নিতে নিতে যখন অনেক প্রশ্ন জমে যাবে, তখন আমার কাছে চলে আসবেন চা খেতে। ‘এখানে চা মূল্যে চিন্তা ক্রয়-বিক্রয় করা হয়’ প্ল্যাকার্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার মনে হয় এখানে যারা চা খেতে আসেন তারা এমনিতেই বুঝে যাবেন যে এটার মানে কী। আপনি জানেন যে এটা একটা সমস্যা এবং এর সমাধান আপনার জানা আছে। তাহলে আপনি সমাধানের সঠিক রোডম্যাপটা দিতে পারলে চায়ের মূল্যে পে করব। চা খাওয়াব কিংবা সে পরিমাণ টাকা আমি আপনাকে দেব। উল্লেখ্য, মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্ট্যাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। গেলো বছরের জুলাই মাসে টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ঈদুল আজহার আগে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অনশন শুরু করেন তিনি। ১৯ দিন অবস্থান করার পর রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছয় দফা দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করে ঘরে ফিরে যান রনি। এএম

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন রেলের | দুর্নীতি | নিয়ে | প্রতিবাদ | করা | রনি | বিক্রি | করছেন | চা