আর্কাইভ থেকে জাতীয়

নারী তুমি শক্তি!

নারী তুমি শক্তি!
কন্যা হয়ে যার জন্ম, স্ত্রীতে তার রুপান্তর, জননী হয়ে যার পূর্ণতা। তিনিই হলেন নারী। ত্রিভূবনজয়ী সত্তা নারী। নারী তুমি শক্তি, নারী তুমি তোমার মতোই সম্পূর্ণ, নারী তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’- প্রতিপাদ্য সঙ্গে নিয়ে আজবুধবার (৮ মার্চ) বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হচ্ছে নারী দিবস। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিনটি। বিশ্বে এক’শ বছরের বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। এই নারী দিবসটি কি? এর শুরু কবে কখন? এটি কি উৎসব নাকি বিক্ষোভ? ইতিহাস আজীবন কথা বলে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসের। এমনই এক ইতিহাসের গুরুত্ব বহণ করে ৮ই মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। শ্রম আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে নারী দিবস এক সময় জাতিসংর্ঘের স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্টকরণ, কাজের অমাণবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় নেমেছিলেন পোশাক কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই আন্দোলনে নারীরা স্বীকার হয় পুলিশি নির্যাতনের। গ্রেপ্তার হন অনেক নারী শ্রমিক। ১৯০৮ সালে একই দিনে প্রায় ২০ হাজার নারী কর্মঘণ্টা কমানো, মজুরী বাড়ানো আর ভোটাভিকারের দাবীতে নিউইয়র্কের রাস্তায় ১৪ দিন ধরে বিক্ষোভ করে। নানা ঘটনার পর ১৯০৮ সালে জার্মানিতে এ দিনটি স্মরণে প্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে প্রায় ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে অংশ নিয়েছিলেন। এ সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ও রাজনীতিবিদ ক্লারা জেটকিন প্রতি বছর ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। নারী দিবস উদযাপনে ক্লারা যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতে কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ ছিলো না। ১৯১৭ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে রুশ নারীরা ‘রুটি ও শান্তির’ দাবিতে বিক্ষোভ করার পর এর তারিখ নির্ধারিত হয়। চারদিন ধরে চলা ওই বিক্ষোভের পর প্রাদেশিক সরকার নারীদের ভোটাধিকার দেয়। রাশিয়ায় ব্যবহৃত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তারিখটি ছিলো ২৩ শে ফেব্রুয়ারি রোববার। আর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তারিখটি ছিলো ৮ মার্চ। এ কারণেই বর্তমানে ৮ই মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়। দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম উদযাবিত হয় ১৯১১ সালে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের আগে থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ও বেসরকারিভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে নারী দিবস পালিত হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে সরকারিভাবে এদেশে আন্তজার্তিক নারী দিবস পালন শুরু হয়। দিবসটির শতবার্ষিকী পালিত হয় ২০১১ সালে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে পালন করা হচ্ছে দিবসটির ১১২ তম বার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিনামূল্যে নারীদের ‘স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ পরীক্ষা ও সচেতনতামূলক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতাল। আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পান্থপথে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে এটি অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাতীয় প্রেস ক্লাব। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এটি অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষ্যে দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। এর মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা, নারী দিবসের বার্ষিক সংকলন ‘কণ্ঠস্বর’র মোড়ক উন্মোচন ও বেলা ১১টায় আলোচনা সভা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনীতে সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়ি, নারী-পুরুষের সমতা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখি’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।        

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নারী | শক্তি