আর্কাইভ থেকে এশিয়া

চোখের সামনে যেন কেয়ামত দেখলাম

চোখের সামনে যেন কেয়ামত দেখলাম

আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ভিন্ন এক জীবনযাত্রার দিকে ছুটে চলছে অসংখ্য মানুষ। বিমানবন্দরে তাদের অনিশ্চয়তার পদচারণা। এরই মধ্যে দেশটির দৃশ্যপট লেখা হয়ে গেছে ভিন্ন রূপে। দেশ ছাড়ার তাড়নায় হতবিহ্বল হাজারো মানুষ। তাদের মধ্যেই মার্কিন বিশেষ অভিবাসী ভিসা নিয়ে বিমানের একটি ফ্লাইট ধরতে ১০ ঘণ্টার অপেক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাবেক কর্মী। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে বিকট শব্দ। কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা। অল্প সময়ের জন্য কানের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো উড়ে যাচ্ছে মানুষের লাশ আর ছিন্নভিন্ন শরীর। দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ হাজার মানুষ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে আইএসের জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছে ১৩ মার্কিন সেনাসহ ৯০ আফগান। আর, আহত হয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে দেড় শ’র মতো মানুষ।

মৃত্যু উপত্যকার সাক্ষী হয়েও নিজের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাবেক ওই কর্মী। তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই যতটা আড়াল থাকা যায় তার জন্য ততটাই মঙ্গলজনক। তিনি বলেন, এই জীবনে কেয়ামত দেখা সম্ভব নয়। তবে, আজ আমি কেয়ামত দেখলাম, নিজের চোখে দেখলাম। যেন আমার পায়ের নিচ থেকে কেউ মাটি সরিয়ে নিয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য ভেবেছিলাম, আমার কানের পর্দা ফেটে গেছে, শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।

আমি দেখলাম ঘূর্ণিঝড়ে প্লাস্টিক ব্যাগ যেভাবে উড়তে থাকে ঠিক সেভাবে মানুষের লাশ আর দেহের ছিন্নভিন্ন অংশ উড়ে যাচ্ছে। দেখলাম আহত অবস্থায় বিক্ষিপ্তভাবে চারপাশে নারী, শিশু আর বৃদ্ধ পড়ে আছে।

এর আগে, তালেবান ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর গেল ২০ বছরে অসংখ্য আত্মঘাতী বোমা হামলা দেখেছে কাবুলের বাসিন্দারা। তাই বিস্ফোরণ এলাকায় পুলিশ এবং লাশ নিয়ে উদ্ধারকর্মীদের ছুটে যাওয়া তাদের কাছে স্বাভাবিক ঘটনার মতোই।

মার্কিন বিশেষ অভিবাসী প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে, লাশ সরিয়ে নিতে বা ঘটনাস্থল থেকে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কেউ ছিল না। মৃত আর আহতরা রাস্তায় আর নালায় পড়ে ছিল। সেসব নালায় পানি নয়, রক্ত বইছিল। শারীরিকভাবে আমি ঠিক আছি। কিন্তু আমার মনে হয় না, যে মানসিক ধাক্কা আর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে গেছি তা আমাকে কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দেবে।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন চোখের | সামনে | যেন | কেয়ামত | দেখলাম