ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি কোনো সংলাপ করবে না। কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন না। বললেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে গুলশান দলীয় চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ওই সংলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আর কোনো গ্রেপ্তার (বিএনপি কর্মীদের) হবে না, পুলিশি হয়রানি হবে না, গায়েবি মামলা হবে না। কিন্তু এর তিনদিন পর থেকে আমাদের প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন, অযোগ্য কোম্পানিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প প্রদান, প্রতিযোগিতা ছাড়া বিনা টেন্ডারে অতিরিক্ত দরে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি এবং স্বল্প মেয়াদের রেন্টাল ও কুইকরেন্টালগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে বিদ্যুৎ খাতে বছরের পর বছর খরচ বাড়ানো হয়েছে। সরকার পরিণাম না ভেবে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রাইভেট সেক্টরেও যৌথমালিকানার নামে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আনন্দে বিভোর ছিল, এখনও আছে। কুইক রেন্টাল ও আইপিপি চুক্তিগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে সরকার-ঘনিষ্ঠ অলিগার্কদের কৌশলে অবৈধ ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেয়া যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বলা হয়েছিল জরুরি পরিস্থিতিতে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম সরকার বাড়াবে। কিন্তু কোনো জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই বিইআরসি'কে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়া এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি সম্পূর্ণ বেআইনি। এ নিয়ে গত ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১২ বার। এতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১১৮% বাড়ানো হলো।
তিনি বলেন, সরকার গত সাড়ে ১৩ বছরে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৪০০%। বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করেছে। অর্থাৎ, পূর্বের দামের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। এতে রপ্তানিমুখী শিল্প চ্যালেঞ্জে পড়েছে, অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে ছোট ও মাঝারি শিল্প। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি উস্কে দেবে মূল্যস্ফীতি, জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়বে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাশিয়ার ঋণটি একটি বাণিজ্যিক চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও এই চুক্তিতে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। ঠিকাদার সময়মত কাজ করতে ব্যর্থ হলেও এ জন্য বাংলাদেশকেই জরিমানা দিতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা এবং বকেয়া রয়েছে ৩১ কোটি টাকা। প্রশ্ন হলো, ঠিকাদারের ব্যর্থতার দায়ভার কেন অযৌক্তিকভাবে বাংলাদেশের জনগণকে বহন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় কোম্পানির যৌথ মালিকানায় ৫০%-৫০% শেয়ারে ২৫ বছরের চুক্তিতে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় সুন্দরবন বিধ্বংসী রামপাল কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। চুক্তিতে ঋণের পুরো দায়ভার বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। প্লান্ট বন্ধ থাকলে, লোকশান হলেও নিয়মিত ভারতীয় কোম্পানিকে কিস্তির টাকা সুদসহ বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে। চুক্তিতে নির্মাণ কাজের ঠিকাদার নিযোগ, কেন্দ্রের জ্বালানি কয়লা সরবরাহ ভারতীয় কোম্পানি করবে। বাংলাদেশ ঠিকাদারের কাজের বিল ও কয়লা পরিবহনের সকল খরচ বহন করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল এর মাধ্যমে সরকার যখন দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বির্পযের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, এরই মধ্যে উন্মোচিত হল আরও এক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী আদানি- বিপিডিবি চুক্তি। সরকার ৫ নভেম্বর ২০১৭ সালে ভারতের আদানি পাওয়ার (ঝাড়খÐ) লিমিটেড এর সাথে ২৫ বছর মেয়াদি ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (কয়লা ভিত্তিক) ক্রয়ের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় আদানি পাওয়ারকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে ১,১৭,০৫৮ কোটি টাকা (১ ডলার = ১০৬.৩২ টাকা), যা দেশের কয়লাচালিত অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ এর তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।