কক্সবাজারে নারী পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত আটটার দিকে সদর মডেল থানায় সাত জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী নারীর স্বামী। এর মধ্যে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং বাকি তিনজন অজ্ঞাত বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস।
শনাক্ত হওয়া আসামিরা হলেন- আশিকুল ইসলাম আশিক, আব্দুল জব্বার জয়া, বাবু ও রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। এদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন ছোটন জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ব্যবস্থাপক। তাকে আটক করেছে র্যাব।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার তথ্য অনুযায়ী, প্রধান অভিযুক্ত আশিকুল ইসলাম কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে। আশিক পেশাদার ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে কৌশলে পাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আশিকের প্রতারণার শিকার এক নারী জানিয়েছেন, চাকরির খোঁজে আশিকের সঙ্গে পরিচয়। পরে প্রেমের সম্পর্কের গড়ে ওঠে। এরপর ঘুরতে গিয়ে আশিক ও তার এক বন্ধুর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হই। আমাকে হুমকি দেয় যাতে এ কথা কাউকে না বলি।
তিনি আরও বলেন, আশিক বিভিন্ন সময় যৌনকর্মীদেরকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে টার্গেট পুরুষের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে। সম্মানের ভয়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে পারে না।
পুলিশ জানায়, ছিনতাই মামলায় কয়েক মাস আগে আশিক গ্রেফতার হয়। কয়েক দিন আগে সে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে সবশেষ পর্যটক ধর্ষণে জড়ায় সে।
উল্লেখ্য, বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক নারী পর্যটক। সংঘবদ্ধ ধর্ষকচক্র ইচ্ছে করে ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে প্রথমে ঝগড়া বাঁধায়। পরে স্বামী সন্তানকে আলাদা করে ওই নারীকে তুলে নিয়ে যায়।
ধর্ষণের শিকার নারী র্যাবকে জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে শিশু সন্তান নিয়ে কক্সবাজার পৌঁছান ওই নারী ও তার স্বামী। সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকত থেকে উঠে আসার সময় ভিড়ের মাঝে কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার স্বামীর। পরে তাদের কাছে ক্ষমা চান ওই নারীর স্বামী। কিন্তু কৌশলে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধায় ওই যুবকরা। পরে ধাক্কাধাক্কি করে ওই নারীর কাছ থেকে স্বামী-সন্তানকে আলাদা করে ফেলে তারা। এক পর্যায়ে ছুরি দেখিয়ে এবং স্বামীকে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে সিএনজি করে শহরের নির্জন স্থানে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তিনজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে।
ওই নারী জানান, এরপর দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজারের জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে নিয়ে আবারও তাকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে হোটেলের কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায় ধর্ষকরা। পরে জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে ডেকে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন ওই নারী। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ।
তবে ৯৯৯-এর পক্ষ থেকে কক্সবাজার পুলিশের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ওই নারীকে সহায়তায় এগিয়ে যাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই নারী আরেকজনের সহায়তায় র্যাবকে ফোন দেন। র্যাব দ্রুত সাড়া দেয় এবং মধ্যরাতে হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে।
মুক্তা মাহমুদ