দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয় বলে মন করছেন তার চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ।
শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি দিন-দিন তার স্বাস্থ্যহানি ঘটার বিষয়টি নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশান্বিত হওয়ার মতো উন্নতি হয়নি। তাই তাকে সিসিইউতে থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা যাচ্ছে না।
আজ মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) ম্যাডাম এখনও অসুস্থ। যেকোনো সময় ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার যেকোনো কিছু হতে পারে। যেকোনো সময় তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে। তিনি সিসিইউতে আছেন।বললেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে কোনো ওষুধ বা যন্ত্র আনা হয়নি। কোনো হাসপাতালে রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও বিদেশ থেকে কিছু আনা কি সম্ভব নাকি। আপনি চাইলে বিদেশ থেকে কিছু এনে হাসপাতালের একটা ডিপার্টমেন্টে স্থাপন করতে পারবেন? এখন কেউ যদি কিছু লিখে দেন তখন আমাদের আসলে কিছুই করার নেই।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, ম্যাডামের কোনো উন্নতি নেই, আগের মতোই আছেন। চরম ঝুঁকির মধ্যে আছেন তিনি। যার কারণে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া যাচ্ছে না। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল বলেই তাকে নানা রকম সাপোর্টে দিয়ে সিসিইউতে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ম্যাডাম কিছুই খেতে পারছেন না। খেলেই বমি করে দিচ্ছেন। শুধু স্যুপ খাচ্ছেন ও স্যালাইন চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ম্যাডাম অবস্থা কখনও ভালো, আবার কখনও খারাপ। চিকিৎসকরা বলছেন এ অবস্থা তার জন্য বিপদজনক। কারণ যেকোনো সময় তার অবস্থা খারাপ হতে পারে। তখন এখনকার এ চিকিৎসা কোনো কাজে আসবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ম্যাডাম যে অবস্থায় আছেন এ অবস্থায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া হলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কোনো কারণে তার অবস্থা যদি আরও খারাপ হয়ে যায়, তাহলে তখন তাকে বিদেশে নিয়ে গেলেও লাভ হবে না। তখন বিদেশে চিকিৎসাও তার কোনো কাজে আসবে না এটাই চিকিৎসকদের আশঙ্কা। কিন্তু সরকার তো সেদিকে কোনো কর্ণপাত করছে না।
বিএনপির একটি সূত্রের ভাষ্য, খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দিতে সরকারের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ অব্যাহত আছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। কিন্তু তারপরও কেন তারা অনুমতি দিচ্ছে না এটা রহস্যজনক। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ইস্যুতে সরকারের অবস্থান দেখে অনেকটা এমন মনে হয় যে তারা স্বাধীনভাবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অন্য কোনো পক্ষ বা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ আসছে বারবার সরকারের ওপর। তবে ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিকে একটা সুস্থ জায়গায় নিয়ে আসতে হলে বাইরের যতই চাপ থাকুক, সরকারের উচিত খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। না হলে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার যদি কিছু হয়ে যায়, এর জন্য সরকার যেমন দায়ী থাকবে, তেমনি চলমান দেশের হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতি স্থায়ী রূপ নেবে।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। তিনি লিভার সিরোসিসসহ অন্যান্য জটিলতায় ভুগছেন। দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
এসআই/