ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজট, যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য কমানোসহ সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ঈদের ছুটি এক দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
রোববার (১৮ জুন) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তের এই সময়ে এবারের ঈদে ঢাকা থেকে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবেন। এ ছাড়া এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় ৪ কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যেতে পারে। এতে আগামী ২২ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিববহনে বাড়তি প্রায় ৮০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২২ জুন থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলেও প্রধানত ২৬ জুন বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ২৬-২৭ জুন থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে। কিন্তু গণপরিবহনে সড়কপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী ওভারলোড হয়ে যাতায়াত করার সক্ষমতা আছে। তবে ২৭ জুন অফিস খোলা থাকায় ঈদের আগে মাত্র ১ দিন ঈদের ছুটি থাকায় বাধ্যতামূলক কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা অনেকেই আটকে যাচ্ছেন। ফলে ২৮ জুন সারা দেশের সকল শ্রেণির গণপরিবহনে এক সঙ্গে সব যাত্রী রাস্তায় নামলে যাতায়াত পরিস্থিতির বেহাল দশা হবে। এই কারণে ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রী চাপ কিছুটা কমতে পারে।’
দেশে সড়ক পথে গণপরিবহনের ভয়াবহ সংকট চলছে উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রার সুযোগ দিলে গেলো ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবারও রাজধানীর ৮ থেকে ১০ লাখ বাইকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারে। এতে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, ‘এবারের ঈদযাত্রায় পশুবাহী ট্রাক ও রাস্তার ওপর গড়ে ওঠা পশুর হাটের কারণে রাজধানীতে তীব্র যানজটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে ঘরমুখো মানুষ। তাই এই মুহূর্ত থেকে রাজধানীর সকল পথের ফুটপাত, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত করা ও পশুরহাট রাস্তা থেকে অপসারণ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাই।’
একই সঙ্গে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলো পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব দাবি করেন, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয়। তাই ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও সকল জাতীয় মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।
পরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে কিছু অসাধু পরিবহন মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’