বাংলাদেশে টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠানের পথিকৃৎ বলা হয় যাকে, সেই জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক এবং পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবির এর আজ দশম মৃত্যুবার্ষিকী।
অধ্যাপক সিদ্দিকা কবীর ৩১ জানুয়ারি ২০১২-তে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার স্কয়্যার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি হৃদরোগসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুপূর্ব বেশ কিছুদিন সিআরপি-তে চিকিৎসারত থাকার পর, উন্নত চিকিৎসার জন্য স্কয়্যার হাসপাতালে স্থানান্তরের পর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত রান্নার বইগুলোর একটি হলো সিদ্দিকা কবিরেরে লেখা ‘রান্না-খাদ্য-পুষ্টি’। রান্না করতে পছন্দ করেন অথচ তাঁর বই নেড়েচেড়ে দেখেননি এমন মানুষ খুব কমই আছে বাংলাদেশে। সত্তর দশক থেকেই রসনাবিলাস মানুষের রান্নাঘরে সিদ্দিকা কবিরের বই অপরিহার্যি একটি উপাদান। শুধু মহিলাদের কাছেই নয়, ভোজন-রসিক পুরুষের কাছেও রয়েছে তাঁর বই’র বেশ কদর।
বাংলাদেশে রান্নার বই লেখার প্রচলন এবং তা জনপ্রিয় করে তোলার প্রধান কৃতিত্ব সিদ্দিকা কবীরের এমন কথা বলেন অনেকে। আজকের দিনেও গৃহবধু অথবা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নারীরা তাঁর বইকে জায়গা দিয়েছেন ঘরের বুক শেলফে। বাংলাদেশের বুক শেলফ পেরিয়ে সিদ্দিকা কবীর পৌছে গেছেন সুদূর প্রবাসেও। বিদেশে পড়তে যাবার আগে রান্নায় অপটু ছাত্র-ছাত্রীরা স্যুটকেসে ভরে নেন তাঁর বই। তাঁর রচিত "রান্না-খাদ্য-পুষ্টি" সবচেয়ে বেশি বিক্রিত রান্নার বই। সিদ্দিকা কবীর ‘রান্না খাদ্য পুষ্টি’ বইটির জন্যই ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে ইংরেজি ভাষায় একটি কারি রান্নার বই লিখেন।
শুধু বই লেখাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না সিদ্দিকা কবীর। ১৯৬৫ সালে তখনকার পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরে বাইরে’ নামে একটি রান্নার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার টিভি উপস্থাপনার শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় সিদ্দিকা কবীর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপূর্ব তৎকালীন পাকিস্তান রেডিওতে ঘোষক হিসাবে খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দেন। ‘সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি’ নামে তাঁর একটি টেলিভিশন শো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে উপস্থাপনার কাজ করতেন শারমিন লাকি।
সিদ্দিকা কবীরের জন্ম পুরানো ঢাকার মকিম বাজারে, ১৯৩১ সালের ৭ মে। তার পিতা মৌলভি আহমেদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ও পরবর্তীতে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। সিদ্দিকা কবীরের মাতা সৈয়দা হাসিনা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে সিদ্দিকা কবীর ব্যাংকার সৈয়দ আলী কবীরকে বিয়ে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সিদ্দিকা কবির খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। সেখান থেকে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
অনন্যা চৈতী