জুমার দিন গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নেয়ার উপযুক্ত সময়। এই দিনে কিছু আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তাই এই দিনটি গুনাহগার বান্দাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে একটি সময় রয়েছে, যখন আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন।
সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি: ৮৮৩)
মূলত জুমার দিনটি হলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার মোক্ষম সময়। ক্ষমা আদায় করে নেয়ার সময়। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান করো।’ (আবু দাউদ: ১০৪৮)
জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পড়ার মাধ্যমেও গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়া যায়। নিষ্পাপ ফেরেশতারাই দরুদ পাঠকারীর জন্য ইস্তেগফার করেন। মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পড়ো। কারণ, জিব্রাইল (আ.) এইমাত্র আল্লাহ তাআলার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে।’’ (তারগিব: ৩/২৯৯)
গুনাহ ক্ষমা ছাড়াও সওয়াব অর্জনের অপূর্ব সুযোগ জুমার দিন। সুন্দরভাবে গোসল করে আগেভাগে মসজিদে গেলেও বিপুল সওয়াবের ঘোষণা রয়েছে হাদিসে। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ: ৩৪৫)
আর জুমা আদায়কারীর জন্য কেয়ামতের দিনে বিশেষ পুরস্কার ও মর্যাদার ঘোষণা তো রয়েছেই। রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন পৃথিবীর দিবসগুলোকে নিজ অবস্থায় উত্থিত করবেন। তবে জুমার দিনকে আলোকোজ্জ্বল ও দীপ্তিমান করে উত্থিত করবেন। জুমা আদায়কারীরা আলো দ্বারা বেষ্টিত থাকবে, যেমন নতুন বর বেষ্টিত থাকে। এটি তাকে প্রিয় ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায়। তারা আলোবেষ্টিত থাকবে এবং সেই আলোতে চলবে। তাদের রং হবে বরফের মতো উজ্জ্বল ও সুগন্ধি হবে কর্পূরের পর্বত থেকে সঞ্চিত মিশকের (বিশেষ সুরভি) মতো। তাদের দিকে জ্বিন ও মানুষ তাকাতে থাকবে। তারা আনন্দে দৃষ্টি ফেরাতে না ফেরাতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের সঙ্গে একনিষ্ঠ সওয়াব প্রত্যাশী মুয়াজ্জিন ছাড়া কেউ মিশতে পারবে না।’ (মুসতাদরাক হাকেম: ১০২৭; সহিহ ইবনে খুজায়মা: ১৭৩০)
উল্লেখ্য, জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না...।’ (সহিহ তারগিব: ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক: ২/৩৯৯)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের যাবতীয় করণীয় সঠিকভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি ইস্তেগফার করার ও দরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।