আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়ন সইতে সইতে মানুষের পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষের ভাষাও হারিয়ে গেছে। বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ স্বৈরাচারের নিষ্ঠুর সাজা ভোগ করছে। ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করছে। ক্ষুধার জ্বালায় চোখের পানিতে ভাসছে। নিপীড়ন সইতে সইতে মানুষের পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষের ভাষাও হারিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, অসহিষ্ণুতা, সীমাহীন লোভ আর উদ্ধত রাষ্ট্রশক্তিকে আশ্রয় করে সর্বত্রই ফ্যাসিবাদের বিকৃত হিংস্র রুপ প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সীমানায় শুধুই অশান্তির আগুন। বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালানোর পর নজিরবিহীন উদ্ভট ডামি নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে চালু হয়েছে এক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ শাসনব্যবস্থা। গোটা বাংলাদেশ এখন তার হাতে জিম্মি হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বত্রই বিরাজ করছে এক ভয়াবহ বিভীষিকা। আওয়ামী লুটেরা, হন্তারক, সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতনকারী, খুনি, দখলবাজ-টেন্ডারবাজদের এক উচ্ছৃঙ্খল উল্লাসের দৃশ্যপট দেশজুড়েই। আর ডামি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শঃ জনগণকে নিয়ে বিদ্রূপ, মিথ্যাচার, তামাশা করছেন। দুদিন আগে শেখ হাসিনা বিমসটেক’র মহাসচিব ইন্দ্র মনি পান্ডেকে বলেছেন- ‘আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের সমস্ত জনগণ এখন গণতন্ত্র উপভোগ করছে।’ আবার বুধবার সকালে গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল। বিএনপি-জামায়াত তাদের অপকর্মের সাজা যেন যথাযথভাবে দ্রুত পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে যে গণতন্ত্রের পদ্ধতি পরমতসহিষ্ণুতাকে মুছে ফেলে একদলীয় একনায়কতন্ত্র স্থাপন করেছেন তা তার এই সাংঘর্ষিক বক্তব্যেই প্রমাণ করে। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ও সত্যের বদলে কায়েম করেছে অন্যায়ের রাজত্ব। দেশে মতপ্রকাশ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নেই। জেনেটিক্যালি ফ্যাসিস্ট বাকশালী দল- আওয়ামী লীগের রক্তের মধ্যেই রয়েছে বাকশালী কর্তৃত্ববাদীর বীজ। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটিকে মুছে দেয়।
তিনি বলেন, কোন মুখে শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারির ভোটারবিহীন ডামি নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে দাবি করেন? তিনি তো জানেন, ৭ জানুয়ারি যা হয়েছে, সেটা হলো আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কাউন্সিল। কোনো নির্বাচনই হয়নি। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ডামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমিয়ে থেকে নির্বাচনের নামে যেই সংসদের জন্ম দিয়েছেন, আগামীতে দেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠিত হলে জনগণের কাছে প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের নামে জাল ভোটের প্রতিযোগিতা, শিশু-কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বার বার জাল ভোট দিয়েও ভোটের দিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫শতাংশ ভোটের ঘোষণা দেয় ইসি। গণভবনের চাপে আবার এক ঘণ্টা পরেই ৪০শতাংশ এবং তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোঁজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানো হয়। ভুয়া, হাস্যকর এ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটের ইতিহাসে কলঙ্ক তিলক খোদাই করেছে ডামি সরকার।’