‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মো. রইশুদ্দিনের মৃত্যু ‘টার্গেট কিলিং’ নয়। এটা নিয়ে উভয় পক্ষেরই একটা দ্বিধা ছিলো। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার সময় খুবই অন্ধকার ও ঘন কুয়াশা ছিলো।’’ এসব কথা বললেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)এর মহাপরিচালক(ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
শনিবার (৯ মার্চ) সকালে রাজধানীতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষদিন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে আমাদের অফিসিয়ালি জানানো হয়েছে-প্রথমতঃ এটা কোনো উদ্দেশ্য প্রণোদিত হত্যাকাণ্ড ছিল না। এটা নিয়ে উভয় পক্ষেরই একটা দ্বিধা ছিলো। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার সময় খুবই অন্ধকার ও ঘন কুয়াশা ছিলো। বিজিবি ও বিএসএফের এখন মূল লক্ষ্য যাতে সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ড না ঘটে। পোশাকধারী বা সাধারণ নাগরিক যিনিই হোক, কোনো প্রাণহানি যাতে না ঘটে, সে জন্য উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কাজ করছে। এখন থেকে এটাই বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘সীমান্তে চোরাকারবারীদের হামলায় গত বছর প্রায় ৬০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা সাধারণত দা দিয়ে খুব কাছ থেকে বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন প্রাণ রক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে, তারা দেখে না গুলিটা বডির কোনো পার্টে লাগছে।’
সীমান্তে বর্ডার হাট বাড়ানো বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘বর্ডার হাট একটি ম্যাকানিজম। আমি বিশ্বাস করি উভয় দেশের সরকার এব্যাপারে সম্মত আছে। এটি দুই দেশের সীমান্ত এলাকার জনগণের জীবনমান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। দুই দেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমরা আলোচনা করেছি যাতে আরো বেশি করে বর্ডার হাট বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ বাস্তবায়ন করা যায়। দুই দেশের সীসান্ত এলাকার জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য যাতে এটি বাস্তবায়ন করা যায়।
সীমান্তে সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার, চোরাকারবারী ও অবৈধ অস্ত্র পাচার রোধে বিএসএফ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক নিতিন আগ্রাওয়াল বলেন,‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এরইমধ্যে আমরা কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা উভয়পক্ষই এনিয়ে আলোচনা করেছি কীভাবে এই প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়, ফলপ্রসু করা যায়। এ জন্য সীমান্তে যৌথ অভিযান, তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানসহ নানা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘গত ২২ ফেব্রুয়ারি রইস উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে উভয় দেশকে আমরা জানিয়েছি। ওই দিন আসলে কী ঘটেছিল, আমি আর এ বিষয়ে ব্যাখ্যায় যাবো না।’
সীমান্তে হত্যা বন্ধ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্ডারে বিএসএফ প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধ, মানবপাচার, চোরাকারবারীর মতো নানা অপরাধীরা বিভিন্ন সময় বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে। তখন আত্মরক্ষার্থে কখনও কখনও বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে বাধ্য হন। গত বছর প্রায় ৬০ জন বিএসএফ সদস্য দা-এর মতো প্রাণঘাতী অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হন। বিএসএফের প্রতিরোধে শুধু বাংলাদেশি নয়, ভারতীয় অপরাধীরাও মারা যায়।
ঢাকায় ৫ থেকে ৯ মার্চ বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। অপরদিকে, ৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফ মহাপরিচালক নিতিন আগ্রাওয়াল। এবারের সম্মেলনে উভয়পক্ষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হন।