তুরস্কের সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন দেশে চাকরি দেয়ার কথা বলে কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে একটি চক্রের মূল হোতা বাবা- ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। কামরুল হাসান (৬৫) ও তার ছেলে ফাহাদ হাসান সিয়াম (২৭) তুরস্ক ছাড়াও মালয়েশিয়া, কানাডা ও বিভিন্ন দেশের কাজে পাঠানোর নাম করে দেড় হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এর আগে, গেলো শনিবার (৩০ মার্চ) নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে বাবা-ছেলের প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বেশ কয়েকটি ভুয়া এজেন্সি খুলে তারা এসব প্রতারণা করতেন। গত কয়েক বছর ধরে তারা এমন কাজ করে আসছিলেন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের সহিদুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ জনের ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তারা। বিষয়টি নিয়ে মামলা হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ।
ডিবির হারুন বলেন, তারা সুনামগঞ্জ জেলার ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলামের মাধ্যমে ২০ জনকে তুরস্কের সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেন। প্রত্যেকে সাত লাখ টাকা করে দিতে বলেন। প্রাথমিকভাবে তিন লাখ করে নেন। কিন্তু কাউকে পাঠাতে পারেননি। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মেডিকেল করার কিছু দিন পর বাবা-ছেলে তাদের ২০ জনের ভুয়া জব অফার লেটার/এগ্রিমেন্ট লেটারে বিভিন্ন তারিখ দেন। পরে তুরস্কে যাওয়া বাতিল করে মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে পাঠাবেন বলে সহিদুলের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এ পর্যন্ত তারা একজনকেও বিদেশে পাঠাতে পারেননি।
হারুন আরও জানান, কামরুল এক সময়ে একটি এজেন্সিতে চাকরি করতেন। পরে সেই এজেন্সি মালিক মারা গেলে তিনি সেটির মালিক বলে পরিচয় দিতেন। সেই এজেন্সির পাশাপাশি ৪/৫টি প্রতিষ্ঠান খুলে বৈধ লাইসেন্সধারী বলে পরিচয় দিতেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে তার কোনো লাইসেন্স ছিল না। ভুয়া লাইসেন্স নাম্বার ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। এছাড়াও তিনি বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নিতেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সরকারিভাবে তুরস্ক, কানাডা, মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিতেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকা ও পাসপোর্ট নেওয়ার পর কিছু কিছু পাসপোর্ট তিনি বিভিন্ন বৈধ এজেন্টদের কাছে জমা দেন ভিসা করার জন্য। সেই এজেন্সি থেকে কয়েকজনের ভিসা নিয়ে দেখাতেন আর বলতেন এইতো কয়েকজনের ভিসা হয়ে গেছে। এগুলো দেখিয়েই পরে অন্যদের কাছ থেকে আরও টাকা নিতেন তিনি। টাকা নেওয়ার পর সাধারণ মানুষদের সাথে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন। এছাড়া কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হমকি-ধামকি দিতেন। একপর্যায়ে গোপনে তিনি তার অফিস পরিবর্তন করে ফেলতেন।
কামরুলের পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা শরীয়তপুর উল্লেখ থাকলেও এনআইডিতে স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর দেওয়া। গত দুই বছরের প্রতারণালব্ধ টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমি কিনেছেন বলে জানায় ডিবি।