সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিজের বাসার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই কে সেই পিয়ন, এ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা–কল্পনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার বাসায় কাজ করে গেছে, পিয়ন, সে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না! কী বলব, এটাই বাস্তব। আমি জানতে পেরে তার কার্ড সিজ করেছি, তাকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছি। যা করার আমি ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর থেকেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সবার প্রশ্ন একটাই, কে এই ৪০০ কোটি টাকার মালিক পিয়ন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার পরিচয় নিয়ে কোনো ইঙ্গিত না দেয়া হলেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র দাবি করছে, সেই পিয়ন হলেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম। তিনি খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহার খিল গ্রামের কেরানী বাড়ির মৃত রহমত উল্যাহর ছেলে।
শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে সুধাসদনে কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। সেখানে আগত অতিথিদের পানি এগিয়ে দিতেন তিনি। ফলে তার নাম হয় পানি জাহাঙ্গীর। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের দুই মেয়াদের পুরোটা সময় এবং প্রধানমন্ত্রীর টানা তৃতীয় মেয়াদেরও কিছু সময় ছিলেন।
জানা যায়, তার আমন্ত্রণে অনেকে হেলিকপ্টারে করে নোয়াখালীর চাটখিলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন। যার কিছু ছিল জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত আয়োজনের অনুষ্ঠানে। তিনিও হেলিকপ্টারে চড়তেন।
এসব অভিযোগে গেলো বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কোনো সম্পর্ক নেই। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিতে বলা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য নমিনেশন তোলেন। সেটা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে পরবর্তীতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় জাহাঙ্গীর উল্লেখ করেছেন, কৃষিখাত থেকে প্রতি বছর তার আয় ৪ লাখ টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে আয় সাড়ে ১১ লাখ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে আয় ৯ লাখ টাকা, চাকরি থেকে ৬ লাখ ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা আয়ের তথ্য জানান। হলফনামার হিসাব অনুযায়ী বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার আয়ের কথা জানিয়েছেন।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, জাহাঙ্গীরের নিজের নামে আড়াই কোটি টাকা ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকা ছিল। ডিপিএস ছিল পৌনে ৩ লাখ টাকা, এফিডিআর ছিল সোয়া ১ কোটি টাকা। স্ত্রীর নামে কিনেছেন গাড়ি। বিভিন্ন কোম্পানিতে কোটি টাকার শেয়ারও রয়েছে। এছাড়া একটি অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে তার ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগও রয়েছে।
জেএইচ