‘বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তাকে আপাতত কিছু দিন সময় দিয়েছে। ‘-এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার(৬ আগস্ট) সকালে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, সংসদ বিষয়কমন্ত্রী কিরেন রিজেজুরাও, কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীসহ সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনা এখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাঁকে ভবিষৎ নিয়ে ভাবতে কিছুটা সময় দিয়েছে ভারত। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তা তিনি ভারত সরকারকে জানাবেন। সেই ভাবনাচিন্তার জন্য সময় নিচ্ছেন। হাসিনার পরিকল্পনা জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নয়াদিল্লি।’
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা লন্ডনে যেতে চান, কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকারের কাছ থেকে এখনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। অন্য কোনও দেশে তিনি যাবেন কি না, সেই ভাবনাচিন্তা চলছে। আপাতত তার জন্যই ভারত তাঁকে কিছুটা সময় দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় ওই বৈঠকে বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকদের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি সরকার এরইমধ্যে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে নয়াদিল্লি। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে গতকাল সোমবার রাতেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেছিলেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে। মঙ্গলবার সকালে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে তিনি সর্বদলীয় বৈঠক করলেন।
সোমবার পদত্যাগ করার পর বাংলাদেশ ছেড়ে গাজ়িয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেসে নামেন হাসিনা। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ভারতের আনন্দবাজারসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এয়ারবেসেই রাত কাটিয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁকে যে বিমানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটি মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছে বলে জানায় সংবাদ সংস্থা এএনআই।
এদিকে, ভারতের একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সে দেশে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে চলেছে। কাজেই ভারতের দুটি পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। একটি মাঝারি মেয়াদের, অন্যটি দীর্ঘ মেয়াদের।
ওই বৈঠকে রাহুল গান্ধী আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে আগ্রহী।
ওই সূত্র আরও জানায়, রাহুল গান্ধীর কথার জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, পরিস্থিতি এখনো টলমলে। ক্রমাগত রূপ বদলাচ্ছে। কাজেই দেখেশুনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, সে দেশের কোনো কোনো এলাকায় ভারতবিরোধী মনোভাব দেখা গেছে। তবে বাংলাদেশে যারাই সরকারে থাকুক, ভারত সরকার তাদের সঙ্গে কাজ করবে।
বৈঠক শেষে শিবসেনার প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী বলেন, বাংলাদেশে যা–ই ঘটুক, তার প্রভাব ভারতের ওপর পড়ে। সেখানে নৈরাজ্য দেখা দিলে ভারতের পক্ষে তা মঙ্গলের হতে পারে না। সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। প্রয়োজনে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতেও দেশকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
এমআর//