কোটা সংস্কার আন্দোলনে হকার শাহজাহান হত্যা মামলায় চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার মহানগর হাকিম আরাফাতুল রাকিব তার রিমান্ডের আদেশ দেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, জিয়াউলকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে আইনজীবী নাজনীন নাহার এর বিরোধীতা করে জামিন চান। শুনানি নিয়ে বিচারক তার আট দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কোটা আন্দোলনের হকার শাহজাহানকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার নিউ মার্কেট থানায় মামলা হলে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) রাতে খিলক্ষেত থেকে জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন তিনি।
জিয়াউল ছাড়াও এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দশ দিন রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যতবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছিল তা জিয়াউল আহসানের নির্দেশে বন্ধ করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় গত ১৭ জুলাই রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায় জিয়াউল আহসানের নির্দেশে। টানা পাঁচদিন সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল ১০ দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবা বন্ধ ছিল ১৩ দিন।
জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অসংখ্য ব্যক্তিকে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। মূলত ব্যাপক পরিসরে গুমের ঘটনা শুরু হয় তার হাত ধরে। সেটি শুরু হয়েছিল ১/১১-এর পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর। ওই সময় আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী, বিরোধী ঘরানার রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, সরকারবিরোধী সমালোচকসহ অসংখ্য ব্যক্তি গুমের শিকার হন। তখন দেশের গণমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন ব্যক্তি গুম হয়েছেন বলে খবর ছাপা হতো। ভুক্তভোগীর পরিবারগুলো থানা থেকে শুরু করে ডিবি, র্যাব কার্যালয়ে ধরনা দিয়ে নিখোঁজ স্বজনের খোঁজ পেত না। অভিযোগ রয়েছে এসবের নেপথ্যে ছিলেন জিয়াউল আহসান।
বছরের পর বছর ধরে নানা অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে ছিলেন জিয়াউল আহসান। আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়াতে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। আওয়ামী লীগ সরকার যেমন তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছে ঠিক তেমনি তিনিও দাপটের সঙ্গে চাকরি করছিলেন। তিনি এতটাই সরকারের আস্থাভাজন ছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে সরকারের পোস্ট দিয়েছেন। তিনি তার পোস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রেখে ঘরে ফেরার কথাও বলছিলেন। এরকম অনেক পোস্ট তিনি দিয়েছিলেন। যদিও সরকার পতনের পর সেগুলো তিনি ডিলিট করে দেন।
সরকার ক্ষমতার পালাবদলের পর সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে রদবদলের ধারাবাহিকতায় গেলো ৬ আগস্ট তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় জিয়াউল আহসানকে।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া জিয়াউল সেনাবাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত কমান্ডো ও প্যারাট্রুপার ছিলেন। ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে তিনি র্যাব-২ এর উপঅধিনায়ক হন।
ওই বছরই তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন এবং র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার পরিচালকের দায়িত্ব পান। র্যাবে দায়িত্ব পালনের সময় থেকেই জিয়াউল আহসান হয়ে উঠেছিলেন সংবাদমাধ্যমে পরিচিত নাম।
কর্নেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক করে তাকে র্যাবেই রেখে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে জিয়াউল আহসানকে পাঠানো হয় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পরিচালকের দায়িত্বে।
পরের বছরই এনটিএমসির পরিচালক করা হয় জিয়াউল আহসানকে। ২০২২ সালে সংস্থাটিতে মহাপরিচালক পদ সৃষ্টির পর তাকেই সংস্থাটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছিল।
এসি//