নারী নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার নারী শিল্পীরা। ১৩ দফা দাবিতে ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছেন সচেতন নারী সমাজের সদস্যরা। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, কৃষ্ণকলি, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, নওশাবা, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদসহ বেশ ক’জন মানবাধিকারকর্মী।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রা সংসদ ভবনে গিয়ে শেষ হয়। এদিন রাত ১০টার পর থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নারীরা একত্রিত হতে থাকেন। সেখান থেকে ফেস্টুন, ব্যানার ও মশাল জ্বালিয়ে পদযাত্রাটি শুরু হয়। এরপর তা সায়েন্সল্যাব, কলাবাগান ও আসাদ গেট হয়ে সংসদ ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ‘পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে হোক সমতা’, ‘আইনসিদ্ধ নিপীড়ন বন্ধ হোক’, ‘কল্পনা চাকমা কোথায়?’, ‘স্টপ স্টেট প্রডিউসড ভায়োলেন্স’, ‘বিত্তবানদের অপরাধ লুকানো বন্ধ করো’, প্রভৃতি স্লোগানে মুখর করে তোলেন রাজপথ।
এ পদযাত্রা সম্পর্কে আয়োজকদের ভাষ্য, শিক্ষার্থী-জনতার রক্তস্নাত বিপ্লবের ফসল হিসেবে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন হলো। এতদিন ধরে আমরা পিতৃতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক যে ক্ষমতা কাঠামো দেখেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে সেই সংস্কৃতি পরিবর্তিত হবে তো?
শিল্পী সায়ানের একটি গানের মাধ্যমে পদযাত্রা সমাপ্ত করেন নারীরা। গানটির শিরোনাম ‘মা-বোনেরা সাহস করো’। এর আগে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা তাদের ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ-যৌন সহিংসতার সঙ্গে যুক্তদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক ও ন্যায্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (সংশোধিত) এর ১৪৬ (৩) ধারা পুনঃসংস্কার করার মাধ্যমে আইনের দিকসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বয়স-লৈঙ্গিক পরিচয় নির্বিশেষে যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে যেকোনোভাবেই ‘ভিক্টিম ব্লেমিং’ (দোষারোপ করা/নিন্দা জানানো) বন্ধ করতে হবে।
পাহাড়ে নারীর ওপর সংঘটিত সামরিক-বেসামরিক পুরুষদের যৌন সন্ত্রাসের খবর গণমাধ্যমে আসার অবাধ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, অভিযোগ যথাযথভাবে আমলে নেওয়া ও সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে পাহাড়ে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের সুবিধার্থে হটলাইন চালু করতে হবে। গ্রামীণ সালিশ/পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
প্রাথমিক লেভেল থেকেই পাঠ্যপুস্তকে যৌন শিক্ষা (গুড টাচ-ব্যাড টাচের শিক্ষা, সম্মতি বা কনসেন্টের গুরুত্ব, প্রাইভেট পার্টস সম্পর্কে জানানো) যোগ করার সঙ্গে সঙ্গে এর কার্যকরী পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে।
মাদ্রাসার শিশুসহ সব শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোনও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হলে ৯০ দিনের মাঝে দ্রুততম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২০২০ সালের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হয়েছিল শেকল ভাঙার পদযাত্রা। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো পালিত হলো এটি।
এসআই/