জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বনানীতে সামরিক কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এরপর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে শায়িত পিলখানার শহীদ সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্যদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানরা শ্রদ্ধা জানান। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বিজিবির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পরে শহীদ পরিবারের সদস্যরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। শেষে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে বিদ্রোহের নামে ঘটে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনায় বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১৭ জন বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভীষিকাময় এ দিনটিকে এবারই প্রথম জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক পরিপত্র জারি করে সরকার প্রতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। উপসচিব তানিয়া আফরোজের সই করা ওই পরিপত্রে বলা হয়, দিনটি সরকারি ছুটি ব্যতীত ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে দিবসটি যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের পর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়, যা পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়।
২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি আদালত ২৫০ জন বিডিআর জওয়ানকে জামিন দেন। ২৩ জানুয়ারি আরও ১৭৮ জনকে মুক্তি দেয়া হয়।
এই হত্যাকাণ্ডে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের আঘাত হানে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও বাংলাদেশ একসঙ্গে এত সংখ্যক সেনা কর্মকর্তাকে হারায়নি।
এদিন দেশের সুরক্ষা কবচ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হারায় বহু মেধাবী ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা। যা সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলে গভীর প্রভাব ফেলে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে।
এসি//