তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছয় ব্যাক্তির করা চারটি আবেদনের শুনানি পিছিয়ে আগামী ৮ মে নির্ধারণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রোববার (২ মার্চ) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
এর আগে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেওয়া হয়। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের অক্টোবরে আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আরেকটি আবেদন করেন তিনি। দুই সংশোধনী নিয়ে পৃথক পাঁচটি রিভিউ আবেদন আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে ১৯৯৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল দেন এবং বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৯৬ সালের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সংবিধানসম্মত বলা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।
২০০৫ সালে রিট আবেদনকারী পক্ষ আপিল করে, যা মঞ্জুর করে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ কয়েকটি বিষয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন আনা হয়, যা ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে করা রিটগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে রুল হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
এমএ//