খাবারের স্বাদ আনতে লবণ অপরিহার্য একটি উপাদান। তবে সঠিক মাত্রায় এর ব্যবহার করা জরুরি। লবণ খাবারের স্বাদ ঠিক রাখলেও অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি আরও বেশি বিপজ্জনক।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫-৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করাই যথেষ্ট। এর বেশি লবণ গ্রহণ করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বাইরের খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, তাই যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যদি কখনো বাইরের খাবার খেতে হয়, তবে লবণের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন:
উচ্চ রক্তচাপ :
অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
হৃদরোগ এবং স্ট্রোক :
লবণের অতিরিক্ত পরিমাণ হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
কিডনি রোগ :
কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যার ফলে কিডনি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
পক্ষাঘাত ও অন্ধত্ব :
দীর্ঘ সময় অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে পক্ষাঘাত বা অন্ধত্বের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
হাড়ের ভঙ্গুরতা :
বেশি লবণ খেলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, যা হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ায়।
শারীরিক স্থূলতা :
অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধারণ করতে পারে, ফলে শারীরিক স্থূলতা বাড়তে পারে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার :
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত লবণ পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ত্বকের সমস্যা :
লবণের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বক শুষ্ক করে দিতে পারে এবং অ্যাজমার উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
মেমোরি লস :
সময়ের সাথে সাথে অতিরিক্ত লবণ স্মৃতিশক্তির উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
কাঁচা লবণ খাওয়ার প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে। রান্না করা খাবারে লবণ ছিটিয়ে খেলে শরীরের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে, যা রক্তচাপ বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি হতে পারে। অল্প পরিমাণ লবণ খাওয়াও শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে খুব কম লবণ খাওয়ার কারণে শরীরে প্রয়োজনীয় মিনারেলের ঘাটতি হতে পারে, যা কখনও কখনও মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন দুই চা-চামচ লবণ (প্রায় ২ গ্রাম) গ্রহণ যথেষ্ট। এর বেশি পরিমাণ লবণ খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে।
সুতরাং, খাবারে লবণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত লবণ থেকে দূরে থাকতে এবং সঠিক পরিমাণে লবণ গ্রহণ করাই সুস্থ জীবনযাপনের চাবিকাঠি।
এসকে//
