বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সংগীতের পথিকৃৎ আজম খান প্রয়াত হয়েছেন আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে। ২০১১ সালের ৫ জুন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি শিল্পী।
আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার আজিমপুর সরকারি কোয়ার্টারে। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান হলেও, পরবর্তীতে ‘আজম খান’ নামেই জনপ্রিয়তা পান। ষাটের দশকে সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হলেও তার জীবন বদলে যায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে। তিনি ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা, যিনি ঢাকার বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেন।
স্বাধীনতা অর্জনের পর, ১৯৭২ সালে 'উচ্চারণ' নামে একটি ব্যান্ড দল গঠন করে আজম খান আনুষ্ঠানিকভাবে সংগীত জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। 'রেল লাইনের ওই বস্তিতে', 'সালেকা-মালেকা', 'হায় রে বাংলাদেশ', 'আলাল ও দুলাল'সহ অসংখ্য গান দিয়ে তিনি দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয় জয় করেন। তাঁর গানগুলোতে ছিল একদিকে সমাজ বাস্তবতা, অন্যদিকে প্রেম, প্রতিবাদ আর মানবিকতার স্পর্শ।
সংগীতের পাশাপাশি তার প্রথম মঞ্চ পরিবেশনা হয়েছিল ঢাকার ঐতিহাসিক মধুমিতা সিনেমা হলে। ভাই ও সুরকার আলম খানের ভাষ্যমতে, সেখান থেকেই আজম খানের গণসংগীত যাত্রার সূচনা হয়। সহজ কথা ও সুরে তিনি সমাজের গভীর গল্প তুলে ধরতেন।
আজম খান ছিলেন একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। তার গান কেবল বিনোদনের উপকরণ ছিল না বরং, তা ছিল একটি সময়ের প্রতিবাদ, প্রেরণা ও ইতিহাসের সাক্ষ্য।
মৃত্যুর দীর্ঘ সময় পরেও তার অবদান সংগীত জগতে চির অম্লান। আজকের অনেক সংগীতশিল্পীই তাকে অনুসরণ করেন। আজম খান কেবল একজন শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন এক বৈপ্লবিক সাংস্কৃতিক ধারা, যার ভিত্তিতে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত।
এসকে//