মধ্যপ্রাচ্যে আবারও বাড়ছে উত্তেজনা। সম্প্রতি ইসরাইল দুই শতাধিক বিমান ব্যবহার করে ইরানের রাজধানী তেহরান ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। জবাবে, ইরানও ছেড়ে কথা বলেনি। তারাও ইসরাইলের বিরুদ্ধে একযোগে শতাধিক ড্রোন পাঠিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
এই টানটান পরিস্থিতিতে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্বের দৃষ্টি এখন ইরান-ইসরাইল সংঘাতের দিকেই। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই হামলা-পাল্টা হামলা গড়াতে পারে পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক সংঘাতে।
সামরিক শক্তির বিচারে কে কোথায়?
দুই দেশই সামরিক দিক থেকে বেশ পরিপক্ব। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ২০টি সামরিক শক্তিধর দেশের মধ্যে ইরান ও ইসরাইল দুটোই অবস্থান করছে। তবে সূচকে ইসরাইল রয়েছে ১৫তম স্থানে, আর ইরান এক ধাপ পিছিয়ে ১৬তম।
প্রতিরক্ষা বাজেট: কার হাতে কত অর্থ?
ইসরাইল প্রতি বছর সামরিক খাতে ব্যয় করে প্রায় ২৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ইরানের প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। ইরানের বাৎসরিক সামরিক বাজেট ৯৯৫ কোটি ডলার।
সৈন্য সংখ্যা: এগিয়ে কে?
সেনা সংখ্যার দিক দিয়ে ইরান অনেকটাই এগিয়ে। ইরানের সক্রিয় ও রিজার্ভ মিলিয়ে মোট সেনা রয়েছে প্রায় ১১ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে ইসরায়েলের সামরিক সদস্য সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭০ হাজার। তবে রিজার্ভ বাহিনীতে ইসরায়েলের উপস্থিতি বেশি—৪ লাখ ৬৫ হাজার, যেখানে ইরানের সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ।
আকাশপথের শক্তি
যুদ্ধবিমান ও সামরিক বিমানের সংখ্যায় ইসরাইল কিছুটা এগিয়ে। ইসরাইলের হাতে রয়েছে ৬১১টি সামরিক বিমান, এর মধ্যে ২৪০টি যুদ্ধবিমান। ইরানের বিমান সংখ্যা ৫৫১টি, যার মধ্যে যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৮৮টি। হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রেও ইসরাইল এগিয়ে—১৪৭টি হেলিকপ্টারের মধ্যে ৪৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। বিপরীতে, ইরানের হেলিকপ্টার আছে ১২৮টি, এর মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার মাত্র ১৩টি। স্থল বাহিনীর সক্ষমতা
ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান সংখ্যার দিক থেকে ইরান এগিয়ে। ইরানের ট্যাংক রয়েছে ১৭১৩টি, যেখানে ইসরায়েলের ট্যাংক সংখ্যা ১৩০০টি। সাঁজোয়া যানেও ইরানের আধিক্য; তাদের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার ৮২৫টি, ইসরাইলের আছে ৩৫৯৮৫টি।
আর্টিলারিতেও ইরান এগিয়ে। ইরানের কাছে রয়েছে ৩৯২টি স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি। অন্য দিকে ইসরাইলের আছে ৩৫২টি। ইরানের টাওয়ার আর্টিলারি আছে ২০৭০টি, ইসরাইলের মাত্র ১৭১টি।
নৌবাহিনী: কার ঘাঁটি মজবুত?
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার বলছে, নৌবাহিনীর শক্তির দিক থেকে এগিয়ে আছে ইরান।
দেশটির ১০৭টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে যেখানে ৭টি ফ্রিগেট এবং ২১টি টহল জাহাজ আর ইসরাইলের যুদ্ধজাহাজ সংখ্যা ৬২টি।
এর মধ্যে টহল জাহাজ আছে ৪৬টি এবং ইসরাইলের কোনো ফ্রিগেট নেই। সাবমেরিনের দিক থেকেও ইরান শক্তিশালী। দেশটির সাবমেরিন আছে ১৯টি যেখানে ইসরাইলের সাবমেরিন আছে ৫টি।
পারমাণবিক শক্তি
সুইডেন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)'র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরুতে বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় ১২ হাজার ৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে।
দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরাইল। এই তালিকায় ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই ছিল না।
তবে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ, বহুবার দাবি করেছে যে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। যদিও তেহরান বরাবরই দাবি করে এসেছে—তাদের পরমাণু কার্যক্রম শুধুই শান্তিপূর্ণ।
ইরান-ইসরায়েলের সামরিক সংঘাত এখন শুধু দুই দেশের বিষয় নয়, এটি গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে উঠছে। একে অপরকে পাল্টা জবাব দেওয়ার এই প্রবণতা কেবল উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে, যা বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে যেকোনো মুহূর্তে।
এমএ//