দেশজুড়ে

ছাত্রীকে কোমল পানি খাইয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার-১

কুড়িগ্রাম উত্তর প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে ১০ম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য, ঠিকাদারসহ চারজনের নামে মামলা করেছে ভুক্তভোগীর বাবা।  মামলার প্রধান আসামি রাব্বীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সাপখাওয়া এলাকায়।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে নাগেশ্বরী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কিশোরীর চাচা আবু তালেব ব্যাপারী। নাগেশ্বরী থানায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলাটি করা হয়। নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বায়ান্ন টিভিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, রাব্বী মিয়া ওই কিশোরীর জেঠাতো বোনের স্বামী। সে প্রায়ই কিশোরীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতো। এ নিয়ে রাব্বীকে সতর্ক করেন কিশোরী। গত ২৩ জুলাই কিশোরীকে নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমী ফুটবল মাঠে হস্ত, বস্ত্র ও কুটির শিল্প মেলায় ডেকে আনে। ঘোরাঘুরির পর কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক খাওয়ালে সে অচেতন হয়ে পড়ে।পরে অভিযুক্ত রাব্বি তার গাগলা খামারটারীর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করে। পরে আবারও তাকে চেতনাশক খাওয়ায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাগেশ্বরী থেকে দূরপাল্লার বাসে ঢাকায় অজানা উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। সকালে ঢাকায় পৌঁছার পর বাসের সুপারভাইজার দেখতে পায় কিশোরী অচেতন। পরে তাকে বোনের বাসায় নেন সুপারভাইজার। রাতে ফিরতি বাসে নাগেশ্বরী পাঠিয়ে দেন।

 এদিকে, পরদিন সকালে নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামলে রাব্বী, জুলহাস ও মোতালেব মেম্বার জোর করে পৌরসভার হাসেম বাজার এলাকার ফারুক হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেও তাকে ধর্ষণ করে রাব্বী। আবারও তাকে চেতনানাশক খাওয়ানো হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় অচেতন কিশোরীকে নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড এনে জুলহাসের হাতে তুলে দেয় রাব্বী। অটোরিকশায় করে রায়গঞ্জ বোর্ডের বাজারের পাশে শফিয়ের আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে কিশোরীকে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে খুনের হুমকি দেন তারা। ভোরে কিশোরীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ধর্ষকরা। পরে নানার বাড়িতে যায় কিশোরী। কিন্তু পাঁচদিন পর নাগেশ্বরী হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। থানায় অভিযোগ করলে তিন আগস্ট মামলা নেয় পুলিশ। 

সংবাদ সম্মেলনে কিশোরীর চাচা অভিযোগ করেন, মামলার ৪দিন হলেও পুলিশের তেমন তৎপরতা নেই। আসামী রাব্বীকে পরিবার থানায় দিলে তাকে কোর্টে পাঠায় পুলিশ। একজন ইউপি মেম্বার ধর্ষনের সাথে জড়িত। তারপরও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা নানাভাবে শুনছি বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কা করছি। 

কিশোরীর বাবা জানান, আমি আসামিদের কঠিন বিচার চাই। সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার চাই'।

এক সপ্তাহ পরে থানায় অভিযোগের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, '৮দিন আমার মেয়ে কথা বলতে পারেনি। অচেতন ছিল। ও না বললে কার নামে মামলা করি। ঘটনা শুনে থানায় গেছি।

বাড়ি ফেরার ৫দিন পর হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, শুরুতে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করান তিনি। পরে বেশি অসুস্থ হলে মেয়েকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাগেশ্বরী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে (মঙ্গলবার) আসামিকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে মামলার বিষয়ে অনেক তথ্য পাচ্ছেন তারা।

মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গাগলা খামারটারী এলাকার রাব্বী মিয়া, নাগেশ্বরী পৌরসভা এলাকার বাঁশেরতলের জুলহাস মিয়া, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সাপখাওয়া এলাকার শফিয়ার রহমান ওরফে শফি কন্ট্রাক্টর এবং রায়গঞ্জ ইউনিয়নের গাটিরখামার এলাকার ইউপি সদস্য মোতালেব মিয়া। এর মধ্যে রাব্বী মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নাগেশ্বরী থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, মামলার প্রধান আসামী রাব্বি জেলে আছে। কোন আসামী ছাড় পাবেনা। পুলিশ তৎপর রয়েছে।

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ছাত্রীকে #কোমল #পানি #খাইয়ে #সংঘবদ্ধ #ধর্ষণ #গ্রেপ্তার১ #