আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষে এখন পর্যন্ত ৪টি প্যানেল তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। প্যানেলগুলো হলো- ‘ছাত্রদলের আবিদ-হামীম-মায়েদ পরিষদ, বাম জোটের প্রতিরোধ পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ ও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট।
সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদলের প্যানেল। তাদের ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে:
১. শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক, আনন্দময়, বসবাসযোগ্য, ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা;
২. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস, নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি;
৩. শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণ ও চলাচল সহজতর করা;
৪. কারিকুলাম, অবকাঠামো ও পরীক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং গবেষণার মানোন্নয়ন;
৫. পরিবহন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, ব্যাটারিচালিত শাটল সার্ভিস প্রচলন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করা।
৬. হয়রানিমুক্ত প্রশাসনিক সেবা, শিক্ষাঋণ এবং ক্যাম্পাসভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা;
৭. তরুণদের গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্তকরণ এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি;
৮. শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল সুবিধা, সাইবার সিকিউরিটি এবং সাইবার বুলিং প্রতিরোধ;
৯. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ, সবুজায়ন ও প্রাণিবান্ধব ক্যাম্পাস তৈরি; এবং
১০. কার্যকর ডাকসু এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিকরণ।
৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল। এসব দফায় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রায় ৫০টি ইস্যুতে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে প্যানেলটি।
তাদের ৮ দফা হলো-
১. ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত নিশ্চিত করা, জাতীয় রাজনীতির মহড়া ও ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির অবসান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনা;
২. অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক গণতান্ত্রিক সংস্কার: স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিমালা, ওয়ান স্টপ সলিউশন, পেপারলেস প্রশাসন, এলএমএস বিস্তার, ডিজিটাল ক্লাসরুম, ল্যাব আধুনিকায়ন, শিক্ষক মূল্যায়ন, নতুন স্টাডি স্পেস, ক্রেডিট ট্রান্সফার এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে সিসিটিভি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা;
৩. শিক্ষার্থীদের কল্যাণ: ওয়ান কার্ড অল সার্ভিস চালু, ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান সিট নীতি বাস্তবায়ন, আবাসন সংকট নিরসনে ভর্তুকি ও অ্যাটাচমেন্ট, স্বাস্থ্যবিমা, মেডিক্যাল সেন্টার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপে সুদবিহীন ঋণ। শিক্ষার্থীদের জন্য হোম টিউটর সার্ভিস ও ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টিং সার্ভিস চালু করা;
৪. শিক্ষার্থীর মর্যাদা: দাড়ি-টুপি, বোরকা-হিজাবসহ পোশাক ও আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে মোরাল পুলিশিং রোধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং ভিন্ন ধর্ম, জাতিসত্তা ও মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য বন্ধ;
৫. ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি: স্টারলিংকের মাধ্যমে উচ্চগতি ইন্টারনেট, এডুরোমের মাধ্যমে ফ্রি ওয়াইফাই, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চক্রাকার বাস, ওয়ান কার্ড অল সার্ভিস বাস্তবায়ন, টিএসসি ও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকিযুক্ত খাবার এবং বিভিন্ন ভবনে নতুন ক্যান্টিন স্থাপন। শিক্ষার্থীদের জন্য হোম টিউটরিং সার্ভিস;
৬. ক্যারিয়ার ও দক্ষতা উন্নয়ন: সেন্ট্রাল ও সায়েন্স লাইব্রেরি আধুনিকায়ন, ২৪ ঘণ্টা লাইব্রেরি সেবা, ই-লাইব্রেরি, এফবিএস ডাটা সেন্টার চালু, ক্যারিয়ার ক্লাব, আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা হাব গঠন;
৭. সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম: ঢাবির নিজস্ব মিউজিয়াম ও কালচারাল সেন্টার, আধুনিক জিমনেশিয়াম ও গেমসরুম, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং হলভিত্তিক খেলার মাঠ সংস্কার; এবং
৮. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তাবনা: নারী হলগুলোতে খেলাধুলার সুযোগ বৃদ্ধি, ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, মেয়েদের নামাজের স্থান প্রসার, অনাবাসিক নারীদের হলে প্রবেশাধিকার এবং জনপরিসর নারীবান্ধব করা।
গত ৩১ আগস্ট ১৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাম জোটের প্রতিরোধ পর্ষদ।
তাদের ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে-
১. ডাকসুর কাঠামোর সংস্কার ও ক্ষমতা বৃদ্ধি: অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্টকরণ, সিনেটের কোরাম পূর্ণ করতে ন্যূনতম দুজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা রেখে ৭৩-এর অধ্যাদেশ সংশোধনকরণ, সিনেটে ৫ জন নয়, ন্যূনতম ১০ জন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি রাখার বিধান যুক্ত করা;
২. শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন করে শিক্ষার মানোন্নয়ন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ-সংকোচন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে গৃহীত ইউজিসির কৌশলপত্র বাতিল করা;
৩. গবেষণায় অগ্রাধিকার: বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেটে অন্তত ১০ ভাগ গবেষণা খাতে বরাদ্দ নিশ্চিত করা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতিটি গবেষণাগারের আধুনিকায়নের ব্যবস্থা করা;
৪. আবাসন সংকট নিরসন: সব হলে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব বন্ধ করা। পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কার, সম্প্রসারণ এবং নতুন ভবন নির্মাণ করতে প্রশাসনকে বাধ্য করা। প্রথম বর্ষ থেকেই প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সিট নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে গণরুম, গেস্টরুম ও র্যাগিং প্রথা নিষিদ্ধ করে ক্যাম্পাস চার্টার প্রকাশ এবং হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা কার্যকর করা;
৫. নারীবান্ধব ক্যাম্পাস: প্রতিটি ফ্যাকাল্টি, নারী হল ও ডিপার্টমেন্টগুলোতে কার্যকরী ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন। নারী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান' নামক হয়রানি নির্মূলসহ হলের যাবতীয় হয়রানিমূলক নিয়ম-কানুনের অবসান ঘটানো। এছাড়া নারীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা প্রত্যাহার করা। নারীদের হলে আবাসিক-অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা;
৬. সব জাতিসত্তার অধিকার নিশ্চিতকরণ: পাহাড় ও সমতলে সব জাতিসত্তার ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। সব জাতিগোষ্ঠীর সমমর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা;
৭. খাদ্য এবং পুষ্টিমান সুরক্ষা: হলগুলোতে ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্যান্টিন নয়, প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ক্যাফেটেরিয়া চালু করা;
৮. শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা: শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারকে আধুনিক এবং ন্যূনতম ১০০ শয্যায় উন্নীত করা;
৯. মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা: মেডিক্যাল সেন্টারের আওতায় ‘মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট সেন্টার’ গড়ে তোলা এবং অনলাইন-অফলাইনে সেবা দেওয়া। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি, পুষ্টি, ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি বিষয়ে কর্মশালার আয়োজন করা;
১০. লাইব্রেরি, সেমিনার, রিডিং রুম এবং কমনরুম: কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত রাখা। নতুন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ এবং ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা;
১১. প্রকাশনা সংস্থাকে সচল করা: বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থাকে সচল করা এবং নিয়মিত বিভিন্ন বই ও গবেষণাপত্র প্রকাশ করা। মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ অনুবাদকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ সূচনা করা;
১২. মুক্ত পরিসর পুনরুদ্ধার ও রক্ষণাবেক্ষণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহাত হওয়া জমি পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করা;
১৩. সাহিত্য এবং সংস্কৃতি: হল-অনুষদে নিয়মিত সাহিত্য- সংস্কৃতি বিষয়ক আড্ডার আয়োজন করা। সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করা। প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী লোক-উৎসবের আয়োজন করা। ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষদের সংস্কৃতি তুলে ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা;
১৪. পরিবহন: বিআরটিসি থেকে ভাড়াভিত্তিক নয়, নিজস্ব অর্থায়নে বাস কেনা;
১৫. ক্রীড়া: বার্ষিক স্পোর্টস ক্যালেন্ডার তৈরি করা যা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সমন্বিত হবে। খেলার মাঠ নারীবান্ধব করা;
১৬. পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষা;
১৭. গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন ও মতপ্রকাশের অধিকার: ৭৩-এর অধ্যাদেশের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। প্রশাসনিক এবং অ্যাকাডেমিক কোনও কাজেই রাষ্ট্র-সরকারের হস্তক্ষেপ চলবে না; এবং
১৮. মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন: মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা, গবেষণা বৃত্তি নিশ্চিত এবং ত্রৈমাসিক প্রকাশনা বের করা।
এদিকে আজ ১ সেপ্টেম্বর ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। ১২ মাসে ৩৬টি সংস্কারের টার্গেট নিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে প্যানেলটি।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ইশতেহার হলো-
১. ডাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন বাস্তবায়ন করা।
২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত করা। ফ্যাসিবাদের চিহ্ন ও ফ্যাসিবাদী কাঠামো, ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও চর্চার পুনরুৎপাদন রোধ করা। গেষ্টরুম, গণরুম কালচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করা। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনি শাস্তি নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে সাম্য, মোফাজ্জল ও আবু বকর হত্যাসহ ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত সকল নিপীড়নের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা।
৩. প্রথম বর্ষ থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বৈধ সিট নিশ্চিত করা। আবাসন সংকটের অস্থায়ী সমাধান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে অস্থায়ী হোস্টেল বা মাসিক আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করা এবং স্থায়ী সমাধান হিসেবে হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৪. নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিতকরণে হল ও অন্যান্য ক্যান্টিন-ক্যাফেটেরিয়াতে পুষ্টিবিদের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাবারের মেন্যু প্রণয়ন এবং ৩ মাস অন্তর খাবার মান পরীক্ষা করা। প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিতে মানসম্মত ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা। আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ‘মিল ভাউচার’ চালু করা।
৫. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা। ছাত্রী হলে পুরুষ কর্মচারী যথাসম্ভব কমিয়ে আনা এবং প্রক্টরিয়াল টিমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নারী সদস্য নিয়োগ দেওয়া।
৬. ছাত্রীদের জন্য ছাত্রী হলে প্রবেশের বিধি-নিষেধ শিথিল করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র প্রদর্শন-সাপেক্ষে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া। ছাত্রী হলে অভিভাবকদের জন্য ‘গার্ডিয়ান লাউঞ্জ’ স্থাপন করা।
৭. ছাত্রীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান কার্যকর করা। মাতৃত্বকালীন সময়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ক্লাসে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শিথিল করা।
৮. কমনরুমে নারী কর্মচারী নিয়োগ দেয়া। মা শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং রুম এবং চাইল্ড কেয়ার কর্নার স্থাপন করা।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সেবাকেন্দ্রিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নিরসন করে ‘পেপারলেস রেজিস্ট্রার বিল্ডিং’ গড়ে তোলা। উচ্চ শিক্ষায় বিদেশে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করা।
১০. ডাকসু ওয়েবসাইট উন্নতকরণ এবং অ্যাপের মাধ্যমে Access to Resources নিশ্চিত করা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা।
১১. শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতিকে আরও কার্যকর করা এবং প্রতিটি বিভাগে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলে ‘মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম’ চালু করা। প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিতে ই-লাইব্রেরি ও কম্পিউটার সেন্টার স্থাপন করা।
১২. শিক্ষার্থীদের নিয়ে রিসার্চ-বিষয়ক কর্মশালা করা। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ফেষ্ট আয়োজন করা। স্মল রিসার্চ গ্র্যান্ট ও রিসার্চ ট্রাভেল গ্র্যান্ট চালু করা। গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা ও গবেষণা সহজলভা করা। নিয়মিত সেমিনার ও কনফারেন্স আয়োজন করা এবং উচ্চমানের প্রকাশনা নিশ্চিত করা।
১৩. কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বিজ্ঞান লাইব্রেরি, হল লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষ এবং ডিপার্টমেন্টের সেমিনার কক্ষে সম্প্রসারণ করা। এগুলোর নিশ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সহজলভ্য করা। লাইব্রেরিগুলো ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা।
১৪. সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর ওয়ার্কশপ আয়োজন করা। উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার-বিষয়ক সেমিনার, কর্মশালার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে জব ফেয়ার আয়োজন করা। তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে Start-up Summit আয়োজন করা।
১৫. অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৬.কেন্দ্রীয় মসজিদ, হল মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয় সমূহের অবকাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়ন করা। ছাত্রীদের ইবাদতের জন্য একাডেমিক এরিয়া বিশেষ করে কার্জন হল এলাকায় উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।
১৭. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও কাউন্সেলিং সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা।
১৮.বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও সেবা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করা এবং ‘DUMC’ অ্যাপ চালুর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও বেশি সহজলভ্য করা। মেডিকেল সেন্টারে চুক্তিভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া। বিশেষ করে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নারী চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা।
১৯. সারাদেশে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে ‘MoU’ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকদের চিকিৎসাবায়ের ওপর বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা। স্বাস্থ্যবীমা-কেন্দ্রিক ভোগান্তি নিরসনে প্রশাসন ও বীমা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করা। হলভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনসাপেক্ষে ফার্মেসি স্থাপন করা।
২০. ‘Physically Challenged’ শিক্ষার্থীদের জনা ‘অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করা।
২১. আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটকে বৈশ্বিক মানদন্ডে উন্নীত করা। প্রত্যেক ভাষায় অন্তত একজন বিদেশি শিক্ষক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া। ল্যাংগুয়েজ রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা।
২২. বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ল্যাবগুলোতে উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করা। সায়েন্স ওয়ার্কশপ, CARS এবং CARASS-এর আধুনিকায়ন নিশ্চিত করা। গবেষণা সহায়ক সফটওয়্যার ও টুলসমূহের সহজলভাতা নিশ্চিত করা। বিশেষষ্ঠত, ইনিস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজি (ILET)-এর ল্যাবে আধুনিক মেশিনারিজ ক্রয় করা মাধ্যমে ল্যাবের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও ইন্ডাস্ট্রির সাথে সমন্বয় করার মাধ্যমে চামড়া শিল্পে অবদান রাখার সুযোগ ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা।
২৩. ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বহিরাগত যান-নিয়ন্ত্রণ, ভাসমান হকার ও ভবঘুরেদের উচ্ছেদ করা। ক্যাম্পাস এরিয়ায় রেজিস্ট্রার্ড রিকশা প্রবর্তন ও ভাড়া তালিকা প্রণয়ন করা।
২৪. যৌন হয়রানি ও সাইবার-বুলিং প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বাস্তবায়ন। যৌন নির্যাতন-বিষয়ক অভিযোগ সেল শক্তিশালীকরণ ও আইনি সহায়তা দেওয়া।
২৫. ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনগুলোতে ফ্রি ‘মেন্সট্রুয়াল হাইজিন প্রোডাক্ট’ সহজলভ্য করা।
২৬. হলভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ‘গ্রিভেন্স রেসপন্স টিম’ গঠন করা এবং ক্যাম্পাস Ombudsperson নিয়োগ করা। নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা ও ভিক্টিমদের সাপোর্টের জন্য ‘ভিক্টিম সাপোর্ট সেল’ গঠন।
২৭. বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত মেইলের Accessibility বাড়ানো। ই-মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন জার্নাল, সাময়িকী ও ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেস রাখা এবং বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক অ্যাপের প্রিমিয়াম অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা। অ্যালামনাইদের জন্য অফিসিয়াল ই-মেইলের ব্যবস্থা করা।
২৮.জরাজীর্ণ বাসগুলো বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় নতুন বাস ক্রয় করা। মোবাইল অ্যাপে রিয়েলটাইম ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা করা। বাসের সংখ্যা ও ট্রিপ বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন রুট বৃদ্ধি করা। অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য শাটল চালু করা।
২৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারাদেশের সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করে ‘লিগ্যাল হেল্প ডেন্ত’ স্থাপন করা।
৩০. শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের অবকাঠামোগত আধুনিকায়ন, এক্সপার্ট কিউরেটরের মাধ্যমে মাঠ পরিচর্যা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা। হল পর্যায়ে শারীরিক শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়ন ও ইনডোর গেমসের আওতা বাড়ানো।
৩১. টিএসসির অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। টিএসসির নিকটবর্তী ছাত্রী হল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের অবস্থান বিবেচনায় সাইন্ডবক্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন।
৩২. Physically Challenged শিক্ষার্থী উপযোগী ক্লাসরুম ও একাডেমিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা। তাদের জন্য ওয়াশরুমে বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩৩. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সেলফ ডিফেন্স প্রশিক্ষণ’-এর আয়োজন করা।
৩৪. হলগুলোতে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং কর্মচারী মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা।
৩৫. পরিবেশ ও প্রতিবেশের সংরক্ষণ, শব্দ দূষণ রোধ, সুষ্ঠু ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন গ্রিন ক্যাম্পাস গঠন করা। ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার্থে প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা।
৩৬. সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্যবাদ মোকাবিলায় এই অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করা।
আই/এ