আর্কাইভ থেকে এশিয়া

নিপীড়িতের জবানিতে উইঘুর নির্যাতনের চিত্র

নিপীড়িতের জবানিতে উইঘুর নির্যাতনের চিত্র

জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে বেঁচে ফেরাদের জবানবন্দীতে আবারও উঠে এলো উইঘুরদের ওপর চীনা কর্তৃপক্ষের ভয়াবহ নিপীড়নের চিত্র। চীনের নিরাপত্তা বাহিনী কীভাবে জোর করে উইঘুর মুসলিম নারীদের গর্ভপাত ঘটিয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছে তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া উইঘুররা। ক্যাম্পগুলোতে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে পুরুষদের জবানবন্দীতেও। উইঘুররা চীনে কি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছে তা উঠে এসেছে ব্রিটিশ গণট্রাইব্যুনালে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দীতে।

চীনের বন্দীশিবির থেকে পালিয়ে এসেছেন উইঘুর নারী বামেরিয়াম রোজি। তাকে ওই শিবিরে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানো হয়। সেই থেকে চোখের পানিতেই সান্তনা খোঁজেন রোজি। তিনি বলেন, অনাগত সন্তান হারানোর কষ্ট কিছুতেই যেন ভোলার নয়।

বেদনার্ত কণ্ঠে বামেরিয়াম রোজি বলেন, আমি ও আরো আট অন্তঃসত্ত্বাকে জোর করে হাসপাতালে নিয়ে যায় চীনা কর্তৃপক্ষ। এরপর আমাদের একটি করে ট্যাবলেট খেতে দেওয়া হয়। ওষুধ খাওয়ার আধা ঘন্টা পর আমাদের পেটে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এভাবেই ওরা আমার গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলে। অথচ তখন সাড়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম আমি।

তিনি আরো বলেন, আমি এখানে পালিয়ে আসতে পারলেও চীনাদের ক্যাম্পে আমার ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে আমার সন্তানকে ফেরত চাই। ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই।

চীনের বিভিন্ন ক্যাম্পে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন রোজির মতো লাখো নারী। শুধুমাত্র উইঘুর মুসলিম হওয়ার অপরাধে গর্ভপাতের মাধ্যমে সন্তান নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, অন্তত ১০ লাখ উইঘুর চীনা কর্তৃপক্ষের বর্বরতার শিকার। জিনজিয়াং প্রদেশে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে আটক, গুম, হত্যা এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। এমনকি সংখ্যালঘু মুসলিমদের ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চলছে।

উইঘুর মুসলিম সেমসিনার গফুর বলেন, জিনজিয়াংয়ে নারীদের জোর করে গর্ভপাত ঘটানো হয়। যারাই গর্ভপাতে অস্বীকৃতি জানায় তাদেরই ঘরবাড়ি গুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সেই ভয়াবহতা আমি নিজেই দেখেছি।

ক্যাম্পগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের পুরুষদের ওপরও নামে বর্বরতা চলছে। আরবিতে বই প্রকাশের অভিযোগে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন মাহমুত তেভেক্কুল।

মাহমুত তেভেক্কুল বলেন, আমাকে আর আমার ভাইকে মাটিতে পিছমোড়া করে বেধে সারারাত পেটানো হয়। টাইগার চেয়ার নামক একটি বিশেষ চেয়ারে বেধে রেখে নির্যাতন করা হতো। একটু নড়াচড়া করলেই হাত-পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হতো।

সম্প্রতি উইঘুরদের ওপর চীনের এই নির্যাতনকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশ। জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় ব্রিটেনে শুরু হয়েছে গণট্রাইব্যুনালও।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নিপীড়িতের | জবানিতে | উইঘুর | নির্যাতনের | চিত্র