প্রতারণার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই নারীর নাম তানজিনা আক্তার ইভা ওরফে মেরি ওরফে মাহি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে রয়েছে নানা অ্যাকাউন্ট। ওইসব অ্যাকাউন্ট ব্যাবহার করে টার্গেট করে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে এবং ম্যাসেঞ্জারে নক করেন তিনি। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার পর মেসেঞ্জারে পাঠান নিজের আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিও। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর রাজধানীর তারকা হোটেলে করেন সাক্ষাত। সেখানে টার্গেট করা ব্যাক্তিকে মাতাল করে ধারণ করে গোপন ভিডিও। পরে সেইসব ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে শুরু হয় ব্ল্যাক্মেইল। এমন অসংখ্য অভিযোগের পর অবশেষে গেলো ১৫ জানুয়ারি প্রতারক ইভাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পাঁচটি মামলা থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইভাকে গ্রেপ্তারের পর অসংখ্য ভুক্তভোগী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তার অন্যান্য সহযোগীর বিষয়েও অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।’
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভা মূলত ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে তার আকর্ষণীয় অঙ্গভঙ্গির অর্ধনগ্ন ছবি পোস্ট করেন। পরে ওইসব অ্যাকাউন্ট থেকে টার্গেট ব্যক্তিদের বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠান এবং মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। নিজেকে কুমারী বলে পরিচয় দিয়ে সখ্য গড়ে তোলেন। গুলশানের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে খেতেও যান তাদের সঙ্গে। দেখা-সাক্ষাতের একপর্যায়ে টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান এবং স্ন্যাপচ্যাটের মেসেঞ্জারে ইভা তার অর্ধনগ্ন ছবি পাঠান। অশ্লীল আলাপচারিতা চালিয়ে যেতে থাকেন তাদের সঙ্গে। পরে ব্ল্যাকমেল করার জন্য ইভা ওইসব ব্যক্তির সঙ্গে অডিও, ভিডিও এবং মেসেজের কথোপকথনের রেকর্ড সংরক্ষণ করে রাখেন। ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন হোটেলে রাত্রিযাপন করেন এবং ব্লাকমেল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।
বেপরোয়া ইভার বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, অষ্টম শ্রেণি পাস হয়ে নিজেকে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পাস বলে দাবি করেন ইভা। কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যুক্তরাজ্যের একটা সফটওয়্যার ফার্মে কর্মরত বলে পরিচয় দেন। তার পারিবারিকভাবে প্রথম বিয়ে হয় ২০০৩ সালে এক প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। কিন্তু তার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য ২০১০ সালে স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়। এরপর লাগামহীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রথম স্বামীর সঙ্গে তার তিন সন্তান থাকলেও তাদের নিজের সন্তান বলে পরিচয় দেন না। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের আগেই তিনি একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। একে একে ১০টি বিয়ে করেন এবং প্রতারণার মাধ্যমে শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তার দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে একসঙ্গে রাতযাপনের তথ্য পেয়েছে ডিবি।
ডিবি সূত্র বলছে, ইভার অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাসুম বিল্লাহ ওরফে রাজু উল্লাহ। রাজুকে গত ১১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে ডিবি। জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পেরেছে, রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ইভার সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। ধীরে ধীরে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং বিভিন্ন হোটেলে রাতযাপন করেন। ইভা ও রাজু একে অন্যের সহযোগিতায় তাদের প্রতারণার ফাঁদ বিস্তৃত করেন। রাজু বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তির কাছে ইভাকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলে পরিচয় দেন।