আর্কাইভ থেকে বিনোদন

নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন

নায়করাজ রাজ্জাকের জন্মদিন
রাজ্জাক রূপালি পর্দায় নিজেকে দিয়েছিলেন উজাড় করে। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলোতে কলকাতার ছবি মুক্তি পাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। উত্তম-সুচিত্রা আর সৌমিত্রে বুঁদ হয়ে থাকা পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত বিকল্প খুঁজে পেল রাজ্জাককে। রাজ্জাকের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়, ১৯৪২ সালে; তার পারিবারিক বাসস্থান ছিল টালিগঞ্জের নাকতলায়। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে স্কুলের নাটকে প্রথম অভিনয় রাজ্জাকের। এরপর কলেজে পড়ার সময় তিনি ‘রতন লাল বাঙালি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। পাঁচশ চলচ্চিত্রের অভিনেতা রাজ্জাকের অভিনয় জীবন শুরুতে মোটেও মসৃণ ছিল না। তীব্র জীবন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। নায়ক হওয়ার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে মুম্বাই গিয়ে সিনেমা বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। মুম্বাই থেকে ফিরে তিনি কলকাতার ‘পংকতিলক’ ও ‘শিলালিপি’ নামে দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মত নায়কদের দাপটে ছিলেন একবারেই মলিন। এ অবস্থার মধ্যেই হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার ভেতর ১৯৬৪ সালে ঢাকায় চলে আসেন রাজ্জাক। বাংলাদেশের বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র জগৎ তখন বিকশিত হচ্ছে। রাজ্জাক ভাবলেন, টালিগঞ্জের চেয়ে ঢাকায় সুযোগের সম্ভাবনা অনেক বেশি। অবশ্য ঢাকাতেও তাকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে। তখন তিনি বিবাহিত। আর্থিক সঙ্কট যেমন ছিল, তেমনি ছিল প্রতিষ্ঠার পথে নানা বাধা। এক সাক্ষাতকারে রাজ্জাক বলেছিলেন, “আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। আমি এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি, না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনোদিন আসেনি।” ১৯৬৪ সালে বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হলে সেখানে অভিনয়ের সুযোগ নেন রাজ্জাক। তখন ধারাবাহিক নাটক ‘ঘরোয়া’য় অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করা। আবদুল জব্বার খানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পান তিনি, তবে নায়ক হিসেবে নয়। সহকারী পরিচালক হিসেবে। এর মধ্যেই ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি ভূমিকায় অভিনয় করেন রাজ্জাক। এরপর ‘ডাকবাবু’, উর্দু ছবি ‘আখেরি স্টেশন’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও তাকে দেখা যায়। এক সময় নির্মাতা জহির রায়হানের নজরে পড়েন রাজ্জাক। তিনি ‘বেহুলা’য় লখিন্দরের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ দেন রাজ্জাককে; সুচন্দার বিপরীতে। ‘বেহুলা’ ব্যবসাসফল হওয়ায় আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি রাজ্জাককে। তার অভিনীত জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের একটি মাইলফলক। সুদর্শন রাজ্জাক সুচন্দার পর শবনম, কবরী, ববিতা, শাবানাসহ তখনকার প্রায় সব অভিনেত্রীকে নিয়ে একের পর এক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র দেন ঢালিউডকে। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা সিনেমায় আবির্ভাব ঘটে রাজ্জাক-কবরী জুটির। একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেছেন তারা। ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘ঢেউ এর পরে ঢেউ’ এবং স্বাধীনতার পর ‘রংবাজ’, ‘বেঈমান’সহ বিভিন্ন সফল সিনেমা উপহার দেন এই জুটি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রাজ্জাক অনেকদিন ছিলেন এক নাম্বার হিরো। তিনশ ছবি তিনি করেছেন। প্রযোজনা করেছেন কিছু ব্যবসা সফল সিনেমা। রাজ্জাক সবচেয়ে বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবানার বিপরীতে। ১৯৭০ সালে ‘মধুমিলন’ ছবি দিয়ে রুপালি পর্দায় জুটি বাঁধেন তারা। তারপর ‘অবুঝ মন’, ‘সাধু শয়তান’, ‘মাটির ঘর’, ‘দুই পয়সার আলতা’সহ অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তারা। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন রাজ্জাক। এর মধ্যে আছে স্বাধীনতা পদক (২০১৫), পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সেরা অভিনেতা)। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট নায়করাজ চলে যান না ফেরার দেশে। বনানী করস্থানে দাকে সমাহিত করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন নায়করাজ | রাজ্জাকের | জন্মদিন