আর্কাইভ থেকে ইউরোপ

কারাবন্দী নার্গিসের পক্ষে সন্তানেরা নিলেন নোবেল শান্তি পুরষ্কার

কারাবন্দী নার্গিসের পক্ষে সন্তানেরা নিলেন নোবেল শান্তি পুরষ্কার
চলতি বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইরানের কারাবন্দী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদীর পক্ষে তার দুই যমজ সন্তানের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার(১০ ডিসেম্বর)নরওয়ের অসলোতে এক অনুষ্ঠানে এই পুরষ্কার দেওয়া হয়।ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ৫১ বছর বয়সী নার্গিস মোহাম্মদী। আর খবরটি কারাগারে বসেই শুনতে পান ইরানের এই নারী নেত্রী। নার্গিসের পাঠানো লিখিত বক্তব্যে কী আছে? রোববার শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে কারাবন্দী মায়ের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনায় নার্গিসের ১৭ বছর বয়সী দুই যমজ সন্তান কিয়ানা রহমানি ও আলী রহমানি। ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগার থেকে নার্গিসের লেখা ওই বক্তব্যে বলা হয়, কারাগারের চরম পরিবেশ থেকে তিনি কথাগুলো তুলে ধরেছেন। তাঁর মতো ইরানের অনেক মানবাধিকারকর্মী বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। জনসমর্থন ও বৈধতা হারানো ইরান সরকার দেশটিতে যে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে, তা পরাস্ত করবে ইরানের জনগণ। অসলোতে পাঠানো্ লিখিত বক্তব্যে নার্গিস মোহাম্মদী আরও বলেন,‘ইরানের নাগরিক সমাজের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজের কাছে এটিই উপযুক্ত সময়। এ কাজে আমি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব।’ কে এই নার্গিস মোহাম্মদী? চলতি বছর ১২২ বছর পুরনো নোবেল শান্তি পুরস্কারটি পেয়েছেন নার্গিস মোহাম্মদী। ২০০৩ সালের পর দ্বিতীয় ইরানি নারী হিসেবে তিনি পান এই পুরষ্কার।এর আগে ওই বছর(২০০৩) শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান ইরানের আরেক মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী শিরিন এবাদি। তার প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-ডিফেন্ডার হিউম্যান রাইটস সেন্টারের (ডিএইচআরসি)ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে বর্তমানে ইরানের কারাগারে থাকা এই নারী নেত্রী। এবছর শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারে জন্য মনোনীতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩৫১ জন। প্রতি বছর মনোনীত সংখ্যার ক্ষেত্রে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।২০১৬ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল ৩৭১।তবে সাড়ে তিনশো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে শেষ হাসি হাসেন ৫১ বছর বয়সী ইরানের এই ‘অগ্নিকন্যা’।নার্গিসকে নিয়ে এ পর্যন্ত ১৯ নারী নোবেল পুরস্কার পেলেন।আর নার্গিস পঞ্চম নোবেল বিজয়ী, যিনি কারাগারে বসে এ পুরস্কার পেলেন। কেন তিনি নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলেন? ব্ষিয়টি স্পষ্ট করেছেন নোবেল পুরষ্কার কর্তৃপক্ষ। নো্বেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানে নারীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সবার জন্য মানবাধিকারের পক্ষে  সোচ্চার থাকার জন্য বর্তমানে কারাবন্দি এই মানবাধিকারকর্মীকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। নার্গিস মোহাম্মদীর সংগ্রামী জীবন ২০১০ সালের ঘটনা।ওই বছরফেলিক্স এরমাকোরা মানবাধিকার পুরস্কার জিতেন শিরিন এবাদি। পুরষ্কার নেয়ার সময় তিনি এটি নার্গিসকে উৎসর্গ করেন। ওইসময় এবাদি বলেন,  ‘এ পুরস্কার আমার চেয়ে বেশি প্রাপ্য সাহসী নারী নার্গিস মোহাম্মদীর’। ১৯ তম নারী হিসেবে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া নার্গিস সত্যিই সাহসী।১৩ বার গ্রেফতার, আদালতে পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত,সব মিলিয়ে ৩১ বছরের কারাদণ্ড, ১৫৪টি বেত্রাঘাত,বর্তমানে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ট-কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি।নার্গিস মানেই যেনো শাসকদের অন্যায়ের বিরুদ্বে ন্যায়ের,অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে অত্যাচারীর সাহসী লড়াই,তীব্র প্রতিবাদ। ইমাম খোমেনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি জীবনের শুরু নার্গিসের। তবে নারীর অধিকার নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি করে আসছেন সেই শিক্ষাজীবন থেকে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য সাহসী লড়াইয়ের ফলে ব্যক্তিগত অনেক ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে। ইরান সরকারের সমালোচনা করায় ১৯৯৮ সালে গ্রেফতার হয়ে এক বছর কারাভোগ করেন। ২০১১ সালে জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করার দায়ে তার ১১ বছরের সাজা হয়। পরের বছর আপিল করলে সাজা কমে হয় ৬ বছর। পরে ব্রিটিশ সরকারের আবেদনে একই বছরের ৩১ জুলাই মুক্তি পান। ২০১৫ সালের ৫ মে তাকে নতুন অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২০ সালে কারাগারে কোভিডে আক্রান্ত হলে তিনি মুক্তি পান। ২০২১ সালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করায় তাকে আবারো আটক করা হয়। তখন থেকেই কারাগারে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী নার্গিস মোহাম্মদী।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন কারাবন্দী | নার্গিসের | পক্ষে | সন্তানেরা | নিলেন | নোবেল | শান্তি | পুরষ্কার